গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় পরিবারের পর পরিবার নিশ্চিহ্ন!

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪০৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৬২ জন। পবিত্র রমজান মাসে ইসরায়েলের এমন বর্বরোচিত হামলায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিশ্ববাসী।

হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় আবাসিক এলাকাগুলো টার্গেট করা হচ্ছে। হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর অনেক ফিলিস্তিনি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন।

কিন্তু ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণে তাদের আবারও ঘর ছাড়তে হয়েছে।

গাজায় নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহতদের মধ্যে অনেকের মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে তাদের আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা চালানো হয়। মুহূর্তের মধ্যে তাদের পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হন।

একজন শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক জানান, ইসরায়েলি হামলার প্রথম কয়েক ঘণ্টা ছিল বিভীষিকাময়। গাজার হাসপাতালগুলোতে আহতদের আর্তনাদ আর স্বজনদের কান্নার রোল শোনা যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে এমন অনেক পরিবার এসেছেন, যারা তাদের শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহ হাতে নিয়ে এসেছেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানান, ইসরায়েলের হামলায় গাজা আবারও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার আল-আহলি হাসপাতালে আহতদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।

হানী মাহমুদ বলেন, “আমরা দেখেছি, এখানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ২৬ জন সদস্যের একটি পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন। এছাড়া, দুই মেয়ের মরদেহ ধরে এক মাকে বিলাপ করতে দেখেছি।”

গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া আল জাজিরাকে বলেন, “চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে প্রতিদিন আহতদের মধ্যে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন।”

এদিকে, গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে রক্ত চেয়ে আবেদন করেছে। কারণ, সেখানে রক্তের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, যেমন— গজ ও ব্যথানাশক ওষুধেরও তীব্র সংকট রয়েছে।

অন্যদিকে, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ফলে সেখানকার হাসপাতালগুলোতে বিদ্যমান সংকট আরও বেড়েছে।

হিন্দ খৌদারি বলেন, “চিকিৎসকরা বলছেন, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, জ্বালানির অভাবে সব চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

এখানকার মানুষ আশা করেছিল, তারা অন্তত রমজানের শেষ দিনগুলো শান্তিপূর্ণভাবে কাটাতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। ফিলিস্তিনিরা অসহায় এবং তাদের অভিভাবকরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।”

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *