**দক্ষিণ মেরুতে গবেষণা কেন্দ্রে কর্মীর বিরুদ্ধে সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, আতঙ্কে অন্যেরা**
অ্যান্টার্কটিকার দুর্গম পরিবেশে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গবেষণা কেন্দ্রে এক কর্মীর বিরুদ্ধে সহকর্মীদের ওপর যৌন হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে ওই ঘাঁটিতে কর্মরত অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দলের প্রধানকে মারধরও করেছেন এবং অন্যদের হুমকি দিয়েছেন।
গবেষণা কেন্দ্রটি কুইন মড ল্যান্ডে অবস্থিত এবং এটি কেপটাউন থেকে ৪,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে, বরফের চাদরে ঢাকা একটি বিশাল এলাকায় অবস্থিত। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বর্তমানে সেখানকার কর্মীদের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রায় ১৩ মাস ধরে, অর্থাৎ আগামী বছর পর্যন্ত তাঁদের এই ঘাঁটিতেই থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে। কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি বর্তমানে মনোবৈজ্ঞানিক মূল্যায়নে সহযোগিতা করছেন এবং তাঁর আচরণের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। তিনি ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এই ঘটনার পর কর্মীদের মধ্যে তীব্র ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো ই-মেইলে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “তাঁর আচরণ উদ্বেগের কারণ হয়েছে। আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, কখন যে আমি পরবর্তী শিকার হব, সেই চিন্তায় আছি।”
আফ্রিকার এই গবেষণা কেন্দ্রে নয় জন কর্মী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীও আছেন। কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং চরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ভ্রমণের আগে মূল্যায়ন করা হয়েছিল, তবে কোনো সমস্যা চিহ্নিত করা যায়নি।
আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে, মেরিয়ন দ্বীপে অবস্থিত একটি গবেষণা কেন্দ্রে এক কর্মী প্রেমঘটিত কারণে কুঠার দিয়ে তাঁর সহকর্মীর ঘর ভেঙেছিলেন।
এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণায় যাওয়া নারীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ হয়রানি বা আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ডিসেম্বরে সাপ্লাই জাহাজ আসার কথা রয়েছে, তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এখন কাউকে সরিয়ে নেওয়ারও উপায় নেই।
এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস