তীব্র ক্ষতির মুখে গ্রিনপিস? তেল কোম্পানির ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মামলা, ভবিষ্যৎ কী?

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীনপিসের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩ হাজার ১শ’ কোটি টাকা) মানহানির মামলা চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে। ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইন নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জের ধরে এই মামলাটি করেছে এনার্জি ট্রান্সফার পার্টনার্স নামের একটি তেল কোম্পানি।

মামলার রায় পরিবেশ রক্ষার স্বাধীনতা এবং প্রতিবাদের অধিকারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মামলার শুনানিতে ইতিমধ্যে তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে এবং এখন তা জুরির বিবেচনাধীন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীনপিস যদি এই মামলা হারে, তাহলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে, এটি মুক্তভাবে কথা বলার এবং প্রতিবাদের অধিকারের ওপরও বড় ধরনের আঘাত হানবে।

২০১৬ সালে আদিবাসী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইন নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এনার্জি ট্রান্সফার পার্টনার্স গ্রীনপিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, তারা বিক্ষোভের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে এবং তাদের সম্পত্তির ক্ষতি করেছে।

কোম্পানিটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে কমপক্ষে ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং সম্ভবত এর দ্বিগুণের বেশি অর্থ চাইছে। তবে গ্রীনপিসের দাবি, তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভে সামান্য ভূমিকা পালন করেছে।

তাদের মতে, এই মামলা আসলে মুক্তভাবে কথা বলার এবং ভিন্নমত প্রকাশের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা। গ্রীনপিস ইউএসএ-এর সিনিয়র লিগ্যাল অ্যাডভাইজার দীপা পদ্মনাভা বলেছেন, “এই মুহূর্তে, যখন আমাদের দেশে পরিবেশ পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগের, তখন এই মামলাটি আমাদের প্রথম সংশোধনী অধিকারের একটি পরীক্ষা।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জলবায়ু এবং পরিবেশ নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর প্রতি সমর্থন বেড়েছে এবং মুক্তভাবে কথা বলার ক্ষেত্রেও কঠোরতা দেখা যাচ্ছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীনপিসের বিরুদ্ধে আনা এই মামলার ধরন অনেকটা ‘স্ল্যাপ’ (SLAPP) মামলার মতো। ‘স্ল্যাপ’ হচ্ছে— জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলা বা প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে প্রভাবশালীদের দায়ের করা মানহানির মামলা।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে ‘স্ল্যাপ’ বিরোধী আইন রয়েছে, নর্থ ডাকোটায় তেমন কোনো আইন নেই। প্রথম সংশোধনী প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র কাউন্সেল জেমস হুইটন মনে করেন, গ্রীনপিসের পরাজয়ের ফল হবে সুদূরপ্রসারী।

তিনি বলেন, “এর ফলস্বরূপ, প্রতিবাদে সহায়তাকারী যে কাউকে অন্যদের কাজের জন্য দায়ী করা হতে পারে।” এনার্জি ট্রান্সফার পার্টনার্স অবশ্য বলছে, তারা গ্রীনপিসের কণ্ঠরোধ করতে চায় না।

তাদের মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, “আমাদের মামলা গ্রীনপিসের কারণে আমাদের কোম্পানির ক্ষতির পুনরুদ্ধারের জন্য, মুক্ত মত প্রকাশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।” ২০১৭ সাল থেকে এনার্জি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী বিলিওনেয়ার কেলসি ওয়ারেন এই মামলাটি পরিচালনা করছেন।

একসময় তিনি এক তেল বিষয়ক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, পাইপলাইন বিরোধীদের ‘জিন পুল থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত’। ২০১৭ সালে সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীরা যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং পাইপলাইনে ছিদ্র করার চেষ্টা করেছে।

তিনি আরও বলেন, “সবাই এই পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলোকে ভয় পায়, কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে যা করেছে, তা ভুল এবং এর জন্য তাদের মূল্য দিতে হবে।” আদালতের শুনানিতে উদ্বেগের আরেকটি কারণ হলো, মামলার বিচার এমন একটি অঞ্চলে হচ্ছে, যেখানে তেল ও গ্যাস শিল্পের প্রভাব অনেক বেশি।

মার্টিন গারবাস নামের একজন মানবাধিকার আইনজীবী বলেন, “আমি এমন কোনো মামলার কথা জানি না, যেখানে এত বেশি জুরির তেল ও গ্যাস শিল্পের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে।” নর্থ ডাকোটার আদালতের বাইরে গ্রীনপিস মামলাটি সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানালেও তা খারিজ হয়ে যায়।

এমনকি তারা শুনানির সরাসরি সম্প্রচারের আবেদন জানালেও আদালত তা মঞ্জুর করেনি। যদি গ্রীনপিস এই মামলায় হেরে যায়, তবে প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেমস হুইটন বলেন, “যদি কাউকে, বিশেষ করে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়, তবে এটি অন্যদের ভয় দেখাবে।” তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *