ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই আলোচনার পূর্বে ইউক্রেন চাইছে, রাশিয়া যেন অবিলম্বে শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
মঙ্গলবার (আজ) তাদের মধ্যে এই ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে। কিয়েভ এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা চাইছে, ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে পুতিন রাজি হন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা আশা করছি, রাশিয়া কোনো শর্ত ছাড়াই এই প্রস্তাবে রাজি হবে। রাশিয়া এবার দেখুক তারা সত্যি শান্তি চায় কিনা।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মস্কো এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে “কিছু সম্পদ ভাগাভাগি” করার বিষয়ে আলোচনা করেছে। এর মধ্যে ভূখণ্ড এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে।
আলোচনার প্রাক্কালে, সেমাফোর নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দুই সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৪ সালে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন থেকে দখল করা ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
ক্রেমলিন বারবার বলেছে, ক্রিমিয়া, যেখানে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর নৌবহরের ঘাঁটি রয়েছে এবং যেখানে আগে রুশ ভাষাভাষীর সংখ্যা বেশি ছিল, সেটি এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অংশ। তবে কিয়েভ এই উপদ্বীপটি ফেরত চাইছে।
আন্তর্জাতিকভাবে অধিকাংশ দেশ ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিন শান্তি চান না।
তিনি অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধ বন্ধের আগে নিজের সামরিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে তিনি “এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন”। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবেন।
তবে এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও সৌদি আরবে ইউক্রেনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধবিরতির কাঠামোতে রাজি করিয়েছেন।
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের প্রস্তুতি হিসেবে, হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গত সপ্তাহে মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এই কেন্দ্রটি যুদ্ধের কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ, যা যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুতের যোগান দিত। ট্রাম্প সোমবার দাবি করেছেন, রাশিয়ান বাহিনী গত বছর রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের ১,৩০০ বর্গকিলোমিটার (৫০০ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইউক্রেনীয় সৈন্যদের “ঘিরে ফেলেছে”।
জেলেনস্কি অবশ্য স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী সেখানে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে, তবে রাশিয়ার সৈন্যদের ঘিরে ফেলার দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা