যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে এবার আলোচনা শুরু হয়েছে। রাশিয়ার দখলে থাকা এই কেন্দ্রটি নিয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের এনারহোদার শহরে অবস্থিত এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছরের মার্চ মাস থেকে এটি রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বারবার এই কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যে আলোচনা চলছে, তাতে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে আলোচনায় ‘ভূমি এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নিয়ে কথা হবে।
তবে, এই কেন্দ্রটি বর্তমানে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত।
যুদ্ধ শুরুর আগে, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতো। এখানে ছয়টি চুল্লি রয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রটি গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গোলাবর্ষণের কারণে এর কিছু ক্ষতিও হয়েছে।
আইএইএ’র পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে কেন্দ্রটির ছয়টি চুল্লিই বন্ধ রয়েছে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইউক্রেন সরকার এর আগে অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে ঝুঁকিতে ফেলছে এবং এর আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের জীবন বিপন্ন করছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনই কেন্দ্রের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেন আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, রাশিয়া কেন্দ্রটিকে তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে।
গত শুক্রবার কিয়েভে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রটি রাশিয়ার জন্য একটি সমস্যা। ইউক্রেন ছাড়া এর কোনো অস্তিত্ব নেই।
এটি পুনরায় চালু করতে আমাদের অর্থ ও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, এতে কয়েক বছর সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত যে, রাশিয়া রাজনৈতিকভাবে ঘোষণা করবে যে তারা খুব শীঘ্রই কেন্দ্রটি চালু করবে এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে এটা এত সহজে হবে না। আইএইএ-কে এর অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, “রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) পুতিনের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় এটি উত্থাপন করবেন।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা শান্তির খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।
জাপোরিঝিয়া অঞ্চল ২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ক্রিমিয়ার মতোই, যা ২০১৪ সালে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়।
রাশিয়া চারটি অঞ্চলকে (ডনেটস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া) নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। যদিও ইউক্রেন এবং পশ্চিমা দেশগুলো এই গণভোটকে ‘প্রহসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন