গাজা উপত্যকায় আবারও যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েল। কয়েক মাস আগে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হওয়ায় এবং ইসরায়েলি সেনাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার হুমকির কারণে তারা এই সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা আরও দাবি করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে, হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বড় কারণ। দেশটির কট্টর ডানপন্থী দলগুলো এই যুদ্ধবিরতিকে হামাসের কাছে নতিস্বীকার হিসেবে দেখেছিল।
তারা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করতে এবং ২০০৫ সালে ভেঙে দেওয়া বসতিগুলো পুনরায় স্থাপন করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে তাদের সমর্থন ধরে রাখতে হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার ফলে গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে আহত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, খাদ্য ও পানির অভাব দেখা দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতিকে ‘নরকের কাছাকাছি’ বলে বর্ণনা করেছেন।
যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার গাজায় গত এক বছরের মধ্যে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বলেছে, যা নতুন করে স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্যদিকে, হামাস এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো মেনে চলার কথা বলছে। তবে, জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে ইসরায়েলের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল সরকার জিম্মিদের উদ্ধারের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা রেখেছে। তারা যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, যা হামাস প্রত্যাখ্যান করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দিলে এর ফল ভালো হবে না।
বর্তমানে, গাজায় প্রায় ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, গাজাবাসীর জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে এবং সংঘাতের অবসান কবে হবে, তা বলা কঠিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন