মাগো, আমি বাঁচতে চাই না! গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুদের কান্না

গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবনে নেমে আসা ট্র্যাজেডি।

গাজার আকাশে এখনো যুদ্ধের দামামা। ইসরায়েলি বিমান হামলার বিভীষিকা আর উদ্বাস্তু জীবনের কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছে সেখানকার শিশুরা।

তাদের চোখে-মুখে গভীর ক্ষত, যা সহজে সারবার নয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার প্রায় ১২ লাখ শিশুর জরুরি মানসিক সহায়তা প্রয়োজন। যুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে স্বাভাবিক জীবন।

যুদ্ধ শিশুদের কিভাবে বিপর্যস্ত করেছে, তা জানতে কথা বলা হয় কয়েকজন শিশুর সাথে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আট বছর বয়সী সা’মা।

সে এখন উদ্বাস্তু শিবিরে দিন কাটায়। যুদ্ধের আগে তার লম্বা চুল ছিল, বন্ধুদের সাথে খেলা করত।

কিন্তু এখন সে চুলগুলো হারিয়ে ফেলেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সা’মা।

তার ভাষায়, “আমার চুল আঁচড়ানোর মতো একটাও চুল নেই, তাই খুব কষ্ট হয়।” চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে তার চুল পড়ছে।

আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো, আনাস ও দোয়া নামের দুই ভাইবোনের। তাদের বাবা-মা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

আনাস জানায়, “আমি বল খেলছিলাম, নিচে নেমে দেখি বাবা-মা রাস্তায় পড়ে আছে। একটি ড্রোন এসে তাদের ওপর বিস্ফোরিত হয়।”

দিদিমা ওম-আলাবেদের কাছে তারা এখন আশ্রয় নিয়েছে। আনাস প্রায়ই তার বাবা-মাকে খুঁজে ফেরে, অন্য শিশুদের মা-বাবার সাথে দেখলে সে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।

মানাল জওদা নামের ছয় বছরের এক শিশু বোমা হামলায় তার বাবা-মাকে হারিয়েছে। সে বর্ণনা করে, “বালু আমার মুখে ঢুকে গিয়েছিল, আমি চিৎকার করছিলাম।

তারা কোদাল দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করছিল, আমাদের প্রতিবেশী বলছিল, ‘এই তো মানাল, এই তো মানাল’। আমি তখনও জেগে ছিলাম, আমার চোখ খোলা ছিল, মুখটাও খোলা ছিল, আর বালু আমার ভেতরে ঢুকছিল।

গাজার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি দলের পরিচালক ড. ইয়াসির আবু জামেই। তিনি জানান, তাদের কর্মীরাও যুদ্ধের কারণে মানসিক আঘাত পেয়েছেন, ফলে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

শিশুদের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক করতে তারা ছবি আঁকার মতো থেরাপি ব্যবহার করছেন। এর মাধ্যমে শিশুরা তাদের ভেতরের কষ্টগুলো প্রকাশ করতে পারে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “গাজায় একটি প্রজন্মকে আতঙ্কিত করে তোলা হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “শিশুরা নিহত হয়েছে, অনাহারে মারা গেছে, ঠান্ডায় জমে মারা গেছে।

এমনকি জন্মের আগেই অনেক শিশু মারা গেছে, মায়ের সাথে তাদেরও মৃত্যু হয়েছে।

যুদ্ধ শিশুদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বাভাবিকতা। উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।

খাবার ও আশ্রয়ের অভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের এই আগ্রাসনে গাজার শিশুদের ভবিষ্যৎ চরম হুমকির মুখে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *