জার্মানির সামরিক খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বিপুলভাবে বাড়াতে ঋণ গ্রহণের সীমা প্রসারিত করার পক্ষে দেশটির পার্লামেন্টে ভোট হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে জার্মানির অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেই সাথে দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নও সহজ হবে। এই সিদ্ধান্ত দেশটির দীর্ঘদিনের আর্থিক নীতির একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই) অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে এই বিলটি পাস হয়। বিলের পক্ষে ভোট দেন ৫১৩ জন এবং বিপক্ষে ভোট দেন ২০৭ জন সংসদ সদস্য।
এর ফলে, জার্মানির সংবিধানের ‘ঋণ বিষয়ক সীমা’ পরিবর্তনের পথ সুগম হয়েছে। এতদিন ধরে জার্মানির সরকার ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা মেনে চলত।
এই পরিবর্তনের ফলে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ১ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে এই সীমাটি প্রযোজ্য হবে না। এছাড়াও, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকার ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল গঠন করতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জার্মানির অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তাই এই পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জার্মানি তার সামরিক শক্তি বাড়াতে চাইছে। এই কারণে প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন।
এছাড়াও, দেশের পুরনো হয়ে যাওয়া অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও অর্থের যোগান দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জার্মানির এই নীতি পরিবর্তনের একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর উপর। এতদিন ধরে জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নে আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল।
কিন্তু এখন তারা নিজেরাই ঋণ গ্রহণের সীমা শিথিল করতে যাচ্ছে। এর ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও তাদের আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে।
জার্মানির এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউরোপের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানি মনে করছে, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
জার্মানির এই বিলটি এখন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে (Bundesrat) যাবে, যেখানেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও এটি সহজেই পাস হয়ে যাবে।
এই আইনটি কার্যকর হলে জার্মানির প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ১০ বছরে জার্মানি তার সামরিক খাতে জিডিপির ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে, যা প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ইউরোর সমান।
জার্মানির এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে দেশটির সামরিক নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে। তবে, এই পরিবর্তনের ফলে দেশটির নিরাপত্তা কতটুকু বাড়বে এবং সামরিক বাহিনী কতটা শক্তিশালী হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন