কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ইউরোপোল। সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমানে সংঘবদ্ধ অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে, যেখানে AI প্রযুক্তি অপরাধীদের ক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউরোপোলের এই সতর্কবার্তা অনুযায়ী, সাইবার অপরাধ, মাদক পাচার, মানব পাচার, অর্থ পাচার, অনলাইন জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে AI-এর ব্যবহার বাড়ছে, যা সমাজের ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।
ইউরোপোলের প্রকাশিত ‘ইইউ সিরিয়াস অ্যান্ড অর্গানাইজড ক্রাইম থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, AI প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অপরাধীরা এখন আরও বেশি সুসংগঠিত এবং ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
বিশেষ করে, গভীর জাল (deepfake) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা মিথ্যা ভিডিও এবং কণ্ঠ নকল করার মতো ঘটনার কারণে প্রতারণা, চাঁদাবাজি এবং পরিচয় চুরি মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এই ধরনের অপরাধের কারণে অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছে, কারণ AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ইউরোপোলের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন ডি বোলে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “সাইবার অপরাধ এখন একটি ডিজিটাল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে, যা সরকার, ব্যবসা এবং ব্যক্তি-সাধারণকে লক্ষ্য করে আঘাত হানছে।
AI-চালিত হামলাগুলো আরও সুনির্দিষ্ট এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে।” তিনি আরও যোগ করেন, কিছু হামলায় লাভ এবং অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্দেশ্যে কাজ করা হচ্ছে, যা রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট এবংideologicallymotivated অর্থাৎ আদর্শগতভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়া এবং তার প্রভাবাধীন দেশগুলো থেকে আসা সাইবার হামলাগুলো এখন সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
এর ফলে, সাইবার অপরাধীরা প্রায়ই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য লুকানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট কার্যকলাপের আশ্রয় নিচ্ছে। সম্প্রতি পোল্যান্ডের একটি হাসপাতালে AI-এর সহায়তায় হওয়া সাইবার হামলার উদাহরণ তুলে ধরে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ম্যাকিয়েজ ডাসজিক বলেছেন, “দুর্ভাগ্যবশত, একটি গুরুতর সাইবার হামলার কারণে হাসপাতালটিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নীতি আরও জোরদার করার প্রস্তুতি চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার ম্যাগনুস ব্রুনার বলেছেন, “আমাদের নিরাপত্তা প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও জানান, ইউরোপোলকে পর্যাপ্ত তহবিল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে সংস্থাটির কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যেও এই সতর্কবার্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, AI প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের প্রভাব বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে।
আর্থিক জালিয়াতি, ডেটা চুরি, এবং ভুল তথ্যের বিস্তার – এই ধরনের অপরাধগুলো বাংলাদেশেও বাড়ছে, যা AI-এর ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাই, এখনই এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস