যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল কর্তৃক বিচারকদের অভিশংসনের দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা রক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে অভিশংসন কোনো উপযুক্ত পদক্ষেপ নয়।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি রবার্টস এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে মতের অমিল হলে অভিশংসন একটি সঠিক ব্যবস্থা নয়। এর জন্য স্বাভাবিক আপিল প্রক্রিয়া বিদ্যমান।”
যদিও বিবৃতিতে সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প ফেডারেল বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র করেছেন। বিশেষ করে, তিনি বিচারক জেমস বোয়াসবার্গকে অভিশংসন করার আহ্বান জানিয়েছেন, যিনি ভেনেজুয়েলার কিছু গ্যাং সদস্যদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন।
ট্রাম্পের মিত্র, যেমন ইলন মাস্কও, ট্রাম্প প্রশাসনের বিপক্ষে রায় দেওয়ার কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বিচারকদের অভিশংসনের দাবি জানাচ্ছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোস্যাল’-এ এক পোস্টে লেখেন, “এই চরম বামপন্থী বিচারক, একজন সমস্যা সৃষ্টিকারী এবং অস্থিরতাকারী, যিনি দুর্ভাগ্যজনকভাবে বারাক হুসেন ওবামার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি।
তিনি পপুলার ভোটও (অনেক ভোটের ব্যবধানে) জেতেননি, এমনকি সাতটি অঙ্গরাজ্যেও জয় পাননি।” ট্রাম্প আরও যোগ করেন, “এই বিচারক, আমার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া অনেক কুটিল বিচারকের মতোই, অভিশংসিত হওয়া উচিত।”
প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিরা ট্রাম্প ও তার মিত্রদের বিচার বিভাগের ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিষয়ে এতদিন নীরব ছিলেন। তাদের নীরবতার কারণ ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের বিপক্ষে আসা কিছু প্রাথমিক রায়, যা আপিল করা হবে এবং সম্ভবত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬-৩ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টে উঠবে।
২০১৮ সালে বিচারপতি রবার্টস ট্রাম্পের এমন সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমাদের এখানে ওবামা-বিচারক বা ট্রাম্প-বিচারক নেই, বুশ-বিচারক বা ক্লিনটন-বিচারকও নেই।” এবারও তিনি কার্যত সেই একই বার্তা দিলেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন