গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ নিহত বেড়ে ৪ শতাধিক। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে চালানো হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শতাধিক। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এলাকাটিকে ‘নরক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
আল জাজিরার অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের আর্তনাদ আর স্বজন হারানোদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর প্রিয়জনের সন্ধানে ব্যাকুল হয়ে ছুটছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করার হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, গাজা শহরের উত্তরে একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হন মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেডিটেরিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের চেয়ারম্যান রামি আবদুর বোন এবং তার পরিবারের সদস্যরা। নিহতদের মধ্যে ছিলেন নারী ও শিশুরাও।
রামির বোন নেরীন, তার স্বামী এবং তাদের সন্তান উবাইদা, ওমর ও লায়ান নিহত হয়েছেন। এছাড়া, উবাইদার স্ত্রী মালাক এবং তাদের সন্তান সিওয়ার ও মোহাম্মদও নিহত হয়েছে।
গাজা শহরের আল-রান্তিসি হাসপাতালের কাছে একদল মানুষের ওপর ইসরায়েলি হামলায় আহতদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও, রাফাহ শহরের আল-জেনাইনা এলাকায় জাতিসংঘের একটি ক্লিনিকে কর্মরত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাজদা আবু আকের এবং তার পরিবারের ওপর বোমা হামলায় নিহত হয়েছে।
হামলায় নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের অন্তত ১০ জন সদস্য ছিলেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশুও রয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিন দিনের এক শিশুও ছিল।
খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বারহুম পরিবারের ১৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এলাকাটিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে।
এছাড়া, খান ইউনিসের আবাসন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় একটি পরিবারের ৬ জন সদস্য নিহত হয়েছে। তারা বোমা হামলা থেকে বাঁচতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিহত শিশুদের চাচী হেবা আল-হিন্দি তার ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘প্রিয় শিশুদের, আল্লাহ তোমাদের রহম করুন এবং তোমাদের মা-বাবাকে ধৈর্য্য ধারণের ক্ষমতা দিন।’
খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার পক্ষ থেকে যাচাই করা একটি ভিডিওতে এক ফিলিস্তিনি নারীকে তার সন্তানদের ও স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা গেছে, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তারা সাহরিতে খাবার পায়নি, আমার মেয়ে রোজায় ছিল এবং সে সাহরিও করতে পারেনি।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মা, আমার বুক পুড়ে যাচ্ছে, আল্লাহ যেন তোমার সন্তানদের জন্য তোমার বুক পোড়ান।’
এদিকে, গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহতদের মরদেহ খুঁজে বের করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করতে হয়েছে স্বজনদের। আল জাজিরা কর্তৃক যাচাইকৃত একটি ছবিতে দেখা যায়, বোমা হামলায় একটি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং একটি গাছের সঙ্গে মানুষের দেহের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা চলছে এবং জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এর অন্যতম প্রধান শিকার।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪৮ হাজার ৫শ ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪১ জন। এছাড়া, এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।
তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেলে মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা