ইসরায়েলি বিক্ষোভে বিস্ফোরণ! গাজায় হামলা কি নেতানিয়াহুর ক্ষমতা রক্ষার চেষ্টা?

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলার বিরুদ্ধে দেশটির ভেতরেই তীব্র প্রতিবাদ উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করে বলছেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করতেই তিনি এই হামলা চালাচ্ছেন।

মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এই অভিযোগ ওঠে। ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েছে, বিশেষ করে নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করতে চাওয়ার পর।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপটি সম্ভবত অবৈধ। সাবেক নৌ কর্মকর্তা এবং বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ওরা পেলেদ নাকাস বলেন, “আসলে গাজার এই হামলা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা একটি বাহ্যিক হুমকি তৈরি করে, যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে অভিযুক্ত করে।”

এদিকে, হামাসের হাতে বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যরাও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য বিবৃতি দিয়েছেন। আয়লেট সভাৎজিকি, যার ভাই নাদাভ পোপলওয়েল গাজায় নিহত হয়েছেন, তিনি বলেন, “এখনও যাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

যারা মারা গেছেন, তাদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে এনে দাফন করা উচিত। আমাদের যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার টেবিলে ফিরতে হবে, এবং তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনা ছাড়া তাদের ফিরিয়ে আনার আর কোনো উপায় নেই। আমি চাই না, অন্য কোনো পরিবার আমার মতো একই দুর্ভোগের শিকার হোক।”

গাজায় নতুন করে হামলার কারণ হিসেবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও দায়ী করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভোট জেতার জন্য তার ডানপন্থী মিত্রদের সমর্থন প্রয়োজন।

আর এই মিত্ররা গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের ঘোর বিরোধী। এমনকি, গত জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিবাদে পদত্যাগ করা সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও মঙ্গলবার সরকারে ফিরে এসেছেন।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তার কারাদণ্ড হতে পারে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, মঙ্গলবার একটি আদালত ‘যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে’ নেতানিয়াহুর শুনানিতে অনুপস্থিত থাকার আবেদন মঞ্জুর করেছে।

নেতানিয়াহু ২০১৩ সাল থেকে শিন বেটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রোনেন বারকে বরখাস্ত করতে চাওয়ার ঘোষণার পরেই এই সপ্তাহের বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়। নেতানিয়াহু এবং বার-এর মধ্যে হামাসের হামলার দায় নিয়ে বিরোধ চলছিল।

উল্লেখ, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এই ঘটনার জেরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়।

শিন বেট সম্প্রতি তাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তবে তারা নেতানিয়াহুকেও সমালোচনা করেছে এবং সরকারের নীতিকেও এই হামলার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বর্তমানে শিন বেট নেতানিয়াহুর সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।

তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যমে গোপন নথি সরবরাহ এবং কাতার থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে, কাতার একসময় গাজায় হামাসকে আর্থিক সহায়তা জুগিয়েছিল।

নেতানিয়াহু অবশ্য ২০২৩ সালের হামলার দায় নিতে রাজি হননি, যদিও তিনি ঘটনার সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমানে ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় এরই মধ্যে প্রায় ৪৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। বর্তমানেও গাজায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে, যাদের অর্ধেকের বেশি হয়তো এরই মধ্যে মারা গেছে।

জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গাজায় যুদ্ধবিরতি চায়, যাতে বন্দীদের ফিরিয়ে আনা যায়। তবে হামাসের বিরুদ্ধে ‘পূর্ণ বিজয়’ অর্জনের পক্ষেও সমর্থন রয়েছে।

কিছু বন্দী পরিবারের সদস্য গাজায় নতুন করে হামলার সমর্থন করেছেন। টিকভা ফোরাম অব হোস্টেজ ফ্যামিলিস এক বিবৃতিতে বলেছে, “অতীতে যা হয়েছে, তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে হামাস স্বেচ্ছায় সব জিম্মিকে ফেরত দেবে না।

কেবল ব্যাপক সামরিক চাপ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে অবরোধ এবং হামাসের পতনের দিকে নিয়ে যাওয়া ভূমি দখলের মাধ্যমেই তাদের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আলোচনার টেবিলে আনা সম্ভব।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *