গাজায় ইসরায়েলের আকস্মিক বোমা হামলায় আবারও ‘নরক’ নেমে এসেছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ফলে সেখানকার ফিলিস্তিনিরা আবারও এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ, ২০২৫) ভোর রাতের দিকে হওয়া এই বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। সম্প্রতি দুই মাসের যুদ্ধবিরতি শেষে হওয়া এই হামলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো অঞ্চলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় আগুন ধরে যায় এবং হামাস পরিচালিত একটি কারাগারেও বোমা আঘাত হানে। গাজা শহরের আল-তাবাইন আশ্রয়কেন্দ্রে যখন মাজিদ নাসের তার পরিবারের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন, তখনই সেখানে আঘাত হানে বোমা।
মাজিদ বলেন, “আমি যখন বাইরে গিয়ে দেখি, কোথায় বোমা পড়েছে, তখনই আমাদের পাশের ঘরে দ্বিতীয় বোমাটি পড়ে। আমি চিৎকার শুনতে পাই, আমার মা এবং বোনের আর্তনাদ, সাহায্যের জন্য ডাকছিলেন তারা।
আমি ঘরে ঢুকে দেখি, ধ্বংসস্তূপের নিচে শিশুরা চাপা পড়েছে।” ভাগ্যক্রমে সবাই আহত হলেও, জীবিত ছিলেন।
বোমা হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষজন তাদের প্রিয়জনদের মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়, যেখানে রাস্তায় ও হাসপাতালের করিডোরে আহত ও নিহতদের ভিড় জমে যায়।
অনেক মা-বাবাকে খালি পায়ে, শিশুদের মৃতদেহ কোলে নিয়ে হাসপাতালে যেতে দেখা গেছে।
যুদ্ধবিরতির সময়ে গাজার বহু মানুষ তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। ত্রাণ সামগ্রী আসায় খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহও বেড়েছিল।
কিন্তু ইসরায়েল হামাসকে নতুন প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য করতে দুই সপ্তাহ আগে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
রমজান মাস শুরু হওয়ার পর পরিবারগুলো একত্রিত হয়ে সূর্যাস্তের সময় খাবার গ্রহণ করতেন, যা তাদের জন্য আনন্দের মুহূর্ত ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের বোমা হামলায় সেই আনন্দ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
খান ইউনিসে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা নরকের চেয়েও ভয়াবহ।”
গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালের চিকিৎসক তানিয়া-হাজ হাসান বলেন, “এখানে এক বিভৎস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে কেয়ামত নেমে এসেছে।” তিনি জানান, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
আহতদের মধ্যে অনেক শিশুকে তাদের ঘুমের পোশাক পরা অবস্থাতেই পাওয়া গেছে।
ডাক্তার বিহীন সীমান্ত সংস্থার (Doctors Without Borders) চিকিৎসক ইসমাইল আওয়াদ জানান, ওই ক্লিনিকে প্রায় ২৬ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়, যাদের মধ্যে একজন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলেন। তার ঘাড়ে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল এবং পরে তার মৃত্যু হয়।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আল-আত্তার ক্লিনিকে চিকিৎসা কর্মীরা জানান, তারা বিদ্যুতের অভাবে এবং জরুরি ভেন্টিলেশন যন্ত্র ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েল শুধু গাজায় সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়নি, গত সপ্তাহে ভূখণ্ডের প্রধান লবণাক্ত জল শোধনাগারটির বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দেয়।
ফলে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য ওষুধ, খাবার, জ্বালানি এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার পূর্বাঞ্চলে, যা ইসরায়েলের কাছাকাছি এবং গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর, সেখানকার ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া বোলেন জানান, বোমা হামলার আগের দিনগুলোতে সবাই উদ্বেগের মধ্যে ছিল। শিশুরা জানতে চাইছিল, যুদ্ধ কি আবার শুরু হবে?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর।