সালজবার্গের পাহাড়ে এখনো ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’-এর সুর বাজে। রুপালি পর্দায় মুক্তি পাওয়ার ৬০ বছর পরও এই জনপ্রিয় সিনেমার স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখতে সারা বিশ্ব থেকে মানুষজন পাড়ি জমায় অস্ট্রিয়ার এই শহরে।
অস্ট্রেলিয়ার সালজবার্গ শহরে এখনো একই রকম আছে সিনেমার শুটিং হওয়া স্থানগুলো। সিনেমার গল্পে ভন ট্রাপ পরিবারের গান আর ভালোবাসার দৃশ্যগুলো এখনো দর্শকদের মনে নাড়া দেয়।
যারা ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’ সিনেমাটি ভালোবাসেন, তারা ইচ্ছে করলে সালজবার্গে গিয়ে সিনেমার স্মৃতিবিজরিত স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। সিনেমার অনেক দৃশ্য এখানে ধারণ করা হয়েছে।
যেমন- লিয়েসল-এর ‘সিক্সটিন গোইং অন সেভেনটিন’ গানটির দৃশ্য ধারণ করা গাজেবো, নানদের আশ্রম ননবার্গ অ্যাবে-এর মতো স্থানগুলো এখনো আগের মতোই রয়েছে।
সালজবার্গে যাওয়া ভ্রমণকারীরা কিভাবে এই সিনেমার শুটিং হওয়া স্থানগুলো খুঁজে বের করতে পারেন, সেই বিষয়ে কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- শহরের আকর্ষণীয় স্থানগুলো: এই সিনেমার ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের মধ্যে ১২টি স্থানই সালজবার্গ শহরে অবস্থিত।
- এছাড়া, সিনেমার শুরুতে যে গ্রামটি দেখানো হয়েছে এবং যেখানে আসল ভন ট্রাপ পরিবার বিয়ে করেছিলেন, সেই স্থান দুটি সালজবার্গার বাইরে সালজকামারগুটে অবস্থিত।
- আর ‘ক্লাইম্ব এভরি মাউন্টেন’ গানের দৃশ্যের জন্য ব্যবহৃত আউটার্সবার্গ পর্বত এবং সিনেমার বিখ্যাত পিকনিকের দৃশ্য ধারণ করা ওয়ারফেনও সালজবার্গ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত।
- ভ্রমণের পরিকল্পনা: যারা সিনেমার শুটিং হওয়া স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চান, তারা ‘অরিজিনাল সাউন্ড অফ মিউজিক ট্যুর’-এর আয়োজন করতে পারেন।
- এই ট্যুরে একটি বাসে করে সিনেমার প্রধান স্থানগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।
- ‘প্যানোরামা ট্যুরস’-এর মালিক স্টেফান হার্জেল জানান, ১৯৬৪ সালে এই সিনেমার অভিনেতা, কলাকুশলী এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পরিবহনের কাজটি তারা করেছিলেন।
- এমনকি ১৯৮৭ সালে যখন জুলিয়া অ্যান্ড্রুজ (মারিয়া ভন ট্রাপ)-কে এবং ২০০৬ সালে বিবিসির ‘হাউ ডু ইউ সলভ এ প্রবলেম লাইক মারিয়া’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদেরও তারা এই স্থানে নিয়ে এসেছিলেন।
- নিজস্ব ভ্রমণ: যারা একটু শান্ত পরিবেশে ঘুরতে পছন্দ করেন, তারা বিনামূল্যে ‘স্মার্টগাইড-অন দ্য ট্রেইল অফ দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’ ব্যবহার করতে পারেন।
- এছাড়াও, হপ-অন-হপ-অফ ট্যুরও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
- অথবা, লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাইড-এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত ট্যুরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেখানে ভন ট্রাপ পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’-এর অভিজ্ঞতা:
- বিশেষ খাবারের স্বাদ: হোটেল হাইপেরিয়নে থাকলে, আপনি ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’ সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা বিশেষ তিন পদের খাবার উপভোগ করতে পারেন।
- হোটেলের ‘গাউমেনফ্রয়েন্ড’ রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফ মাইকেল ডাউস এই খাবারগুলো তৈরি করেন।
- খাবারের প্রতিটি উপাদান সিনেমার দৃশ্য, আল্পাইন সংস্কৃতি এবং আসল ভন ট্রাপ পরিবারের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
- ঐতিহ্যবাহী পোশাক: সালজবার্গের পুরনো শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ‘সালজবার্গার হেইমাটওয়ার্ক’ নামক দোকানে স্থানীয় কারুশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাওয়া যায়।
- এই দোকানে নারীদের জন্য বাভারিয়ান পোশাক ‘ডিরন্ডলস’ (বিশেষ ধরণের পোশাক) পাওয়া যায়।
- এই পোশাকটির মধ্যে বডিস, ব্লাউজ, উঁচু কোমরযুক্ত স্কার্ট এবং অ্যাপ্রোন থাকে।
- সিনেমার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দোকানটি সীমিত সংস্করণের নতুন ‘ডিরন্ডলস’-এর সংগ্রহ তৈরি করেছে।
- পারিবারিক ভ্রমণের সুযোগ: পরিবার নিয়ে ভ্রমণে গেলে ‘মারিয়াস বাইসাইকেলস’-এর মাধ্যমে সিনেমার লোকেশনগুলোতে সাইকেল ট্যুর উপভোগ করা যেতে পারে।
- সাড়ে তিন ঘণ্টার এই ট্যুরে সিনেমার প্রধান স্থানগুলোতে ছবি তোলার সুযোগ থাকে।
- যেমন- মোৎজার্ট ব্রিজ, মিরারবেল গার্ডেন এবং ফেলসেনরাইটশুলে (যেখানে পরিবারটি ১৯৩৮ সালের সালজবার্গ সামার ফেস্টিভালে জয়ী হওয়ার পর ‘সো লং’ গানটি গেয়েছিল)।
- হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা: যারা সিনেমার শুটিং হওয়া স্থানগুলোতে থাকতে চান, তারা ‘শ্লস লিওপোল্ডসক্রন’-এ থাকতে পারেন।
- এই প্রাসাদে বারন ভন ট্রাপ এবং ব্যারোনেস স্ক্রেডার-এর গোলাপি লেমনেড পান করার দৃশ্য এবং মারিয়া ও শিশুদের নৌকায় চড়ে বেড়ানোর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল।
অন্যান্য আকর্ষণ:
- পাপেট শো: সালজবার্গ ম্যারিয়নেট থিয়েটারে একটি স্থায়ী প্রদর্শনী রয়েছে।
- এখানে একটি ৯০ মিনিটের ‘বিগ ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল ইন মিনিএচার’ পরিবেশিত হয়, যেখানে ১০০টির বেশি পুতুল ব্যবহার করে সিনেমার গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
- অল্প সময়ের মধ্যে কিছু দেখতে চাইলে ৩৫ মিনিটের একটি বিশেষ শো উপভোগ করা যেতে পারে, যেখানে ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’ এবং মোৎজার্টের ‘ম্যাজিক ফ্লুট’ থেকে কিছু অংশ পরিবেশন করা হয়।
- ডু-রে-মি দৃশ্য: যারা সিনেমার ‘ডু-রে-মি’ দৃশ্যটির অভিজ্ঞতা নিতে চান, তারা মঙ্কসবার্গ এলিভেটর অথবা উইংকলার টেরাসে যেতে পারেন।
- এখান থেকে সালজবার্গ শহর এবং সালজাক নদীর সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়, যা ছবি তোলার জন্য দারুণ।
- অভিনেতাদের পছন্দের হোটেল: সিনেমার অভিনেতা ক্রিস্টোফার প্লামার (ব্যারন ভন ট্রাপ) ‘ব্রিস্টল হোটেল’-এর স্কেচ বারে যেতে পছন্দ করতেন।
- এছাড়াও, জুলিয়া অ্যান্ড্রুজ (মারিয়া ভন ট্রাপ) ‘হোটেল সাচার’-এ এবং অন্যান্য শিশু অভিনেতাগণ ‘হোটেল অ্যাম মিরারবেলপ্ল্যাটজ’-এ ছিলেন।
- আশেপাশের ভ্রমণ: সালজবার্গের আশেপাশে ভ্রমণের জন্য এখানকার এস-bahn রেল ব্যবস্থা, ট্রলিবাস এবং লোকাল বাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এছাড়া, শহরের বাইরের স্থানগুলোতে যেতে চাইলে গাড়ি ভাড়া করার সুযোগ রয়েছে।
ভ্রমণের কিছু জরুরি তথ্য:
- ক্যাফেতে পেমেন্ট: সালজবার্গে ক্যাফেতে বিল পরিশোধের জন্য সাধারণত নগদ টাকা ব্যবহার করা হয়।
- শীতকালে ভ্রমণ: শীতকালে আউটডোর ট্যুরগুলো বন্ধ থাকে, তাই এই সময়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাইড-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
- তবে, বাস ট্যুর এবং অন্যান্য ইনডোর অভিজ্ঞতা সারা বছর উপভোগ করা যায়।
- অগ্রিম বুকিং: পর্যটকদের ভিড়ের কারণে আগে থেকে সবকিছু বুক করে রাখাই ভালো।
- বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য: এখানকার ঐতিহাসিক ভবনগুলোর কারণে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু অসুবিধা হতে পারে।
- তবে, বেশিরভাগ হোটেলেই হুইলচেয়ার ব্যবহারযোগ্য কক্ষ রয়েছে এবং শহরের অনেক স্থানেই মোটরচালিত হুইলচেয়ার ব্যবহার করা যায়।
প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ পর্যটক সালজবার্গ ভ্রমণ করেন, যা এই শহরের জনসংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। যারা ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’ ভালোবাসেন, তাদের জন্য সালজবার্গ একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক