মাছেরাও কি তাদের পছন্দের ডুবুরিদের চেনে? নতুন গবেষণায় মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য
গবেষণা বলছে, ভূমধ্যসাগরের কিছু মাছ তাদের পছন্দের ডুবুরিদের চিহ্নিত করতে পারে। কিভাবে? ডুবুরিদের পোশাকের রং দেখে! সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটি করেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের গবেষক অ্যালেক্স জর্ডান এবং তার সহকর্মীরা। তারা ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপে স্যাডেলড সি ব্রীম (Saddled sea bream) এবং ব্ল্যাক সি ব্রীম (Black sea bream) নামক দুই প্রজাতির মাছের ওপর পরীক্ষা চালান। এই মাছগুলো ভূমধ্যসাগরে বেশ পরিচিত।
গবেষকরা প্রথমে মাছগুলোকে প্রশিক্ষণ দেন। তারা রঙিন পোশাক পরে পানির নিচে যান এবং মাছগুলোকে চিংড়ির টুকরা খাওয়ান। এরপর তারা সোজা সাঁতরাতে শুরু করেন এবং যে মাছগুলো তাদের অনুসরণ করত, তাদের আরও খাবার দেওয়া হতো। ধীরে ধীরে মাছগুলো বুঝতে পারে, কোন ডুবুরি তাদের খাবার দেয়।
দ্বিতীয় ধাপে, গবেষকরা ভিন্ন রঙের পোশাক পরে পানিতে নামেন। একজন গবেষক মাছগুলোকে খাবার দেন, অন্যজন দেন না। দেখা যায়, মাছগুলো ধীরে ধীরে সেই ডুবুরিকে অনুসরণ করতে শুরু করে, যিনি তাদের খাবার দিচ্ছিলেন। এর থেকে বোঝা যায়, মাছগুলো পোশাকের রং দেখে ডুবুরিদের আলাদা করতে পারছিল।
চূড়ান্ত পরীক্ষায়, গবেষকরা একই রঙের পোশাক পরে ডুব দেন। এবার কিন্তু মাছগুলো আগের মতো খাবার দেওয়া ডুবুরিকে চিহ্নিত করতে পারল না। তারা দু’জনকেই অনুসরণ করতে শুরু করে। এই পরীক্ষা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, মাছগুলো ডুবুরিদের পোশাকের রং দেখেই চিনতে পারছিল।
গবেষকরা বলছেন, মাছেরা আসলে কোনো কিছুর সঙ্গে পুরস্কারের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। তারা সম্ভবত রঙিন পোশাক পরা কোনো মানুষকে দেখে বুঝতে পারে, এর পরে তাদের জন্য খাবার অপেক্ষা করছে। মানুষের ক্ষেত্রে যেমন, আমরা চোখের পাতা বা চুলের স্টাইল দেখে অন্যকে চিনি, তেমনই মাছেরা সম্ভবত পোশাকের রং ব্যবহার করে।
তবে, এই গবেষণা মাছের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আরও অনেক নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে গবেষকরা দেখতে চান, মাছেরা কি মানুষের মুখ বা শরীরের অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য দেখেও চিনতে পারে? এছাড়াও, এই গবেষণা জলজ গবেষণা এবং বাস্তুসংস্থানবিদদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, যদি মাছেরা কোনো নির্দিষ্ট গবেষককে চিনে ফেলে, তাহলে তারা হয়তো কিছু পরীক্ষার সময় সেই গবেষকদের এড়িয়ে যেতে পারে বা তাদের সঙ্গে বেশি মিশতে পারে, যা পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক