যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত সম্প্রতি এক রায়ে জানিয়েছেন, দেশটির বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি (USAID) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে এই সংস্থা গুটিয়ে নেওয়ার কিছু পদক্ষেপ বাতিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতের বিচারক থিওডোর চুয়াংয়ের দেওয়া এই রায় ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। জানা যায়, ইউএসএআইডি বন্ধের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের।
আদালত মনে করেন, মাস্ক সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘নিয়োগ ধারা’ লঙ্ঘন করেছেন। এই ধারার আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, কিন্তু মাস্ক এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি।
রায়ে বলা হয়েছে, মাস্ক কার্যত একজন সরকারি কর্মকর্তার মতো ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন, যদিও তার সেই ক্ষমতা ছিল না। বিচারক উল্লেখ করেন, যদি কোনো উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টের হয়ে সরাসরি কাজ করেন এবং সিনেটের অনুমোদন ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে ‘নিয়োগ ধারা’র কোনো অর্থ থাকে না।
মামলার শুনানিতে সাবেক ইউএসএআইডি কর্মীরা অভিযোগ করেন, মাস্কের নির্দেশে সংস্থার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সদর দপ্তর গুটিয়ে ফেলা হয়। এছাড়া, কর্মীদের বরখাস্ত করা হয় এবং তাদের সরকারি ই-মেইল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালত ট্রাম্প প্রশাসনকে ইউএসএআইডি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে, কর্মীদের ই-মেইল ও অন্যান্য সিস্টেমে পুনরায় প্রবেশাধিকার দিতে এবং সংস্থার সদর দপ্তর ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, ইউএসএআইডি-এর প্রায় ৫,২০০টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, সংস্থার কর্মী সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি থেকে কমিয়ে ৬১১ জনে নামিয়ে আনা হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে খবর পাওয়া যায়, ইউএসএআইডি-এর সদর দপ্তর দখলের জন্য সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে পরিদর্শন করেন। পরে জানা যায়, সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ অফিসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।
আদালত প্রশাসনকে ১৪ দিনের মধ্যে ইউএসএআইডি-কে তার পুরনো অফিসে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে। একই সঙ্গে, ইউএসএআইডি-এর কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ না করার এবং অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির কর্মীদের গোপন নথি ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা ফেডারেল রেকর্ডস অ্যাক্টের লঙ্ঘন হতে পারে। এই আইনের অধীনে, সরকারি নথি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian