চন্দ্রপৃষ্ঠে সূর্যাস্তের প্রথম উচ্চ-সংজ্ঞা সম্পন্ন ছবি প্রকাশ করলো নাসা।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সম্প্রতি চাঁদে সূর্যাস্তের প্রথম উচ্চ-সংজ্ঞা সম্পন্ন ছবি প্রকাশ করেছে। এই ছবিগুলি তুলেছে ‘ব্লু ঘোস্ট’ নামের একটি ব্যক্তিগত ল্যান্ডার। ছবিগুলি চাঁদের ‘লুনার হরাইজন গ্লো’ নামক রহস্যজনক ঘটনা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্য দিতে পারে।
মঙ্গলবার, হিউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে নাসা ছবিগুলো উপস্থাপন করে। টেক্সাসের কোম্পানি ‘ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস’-এর সঙ্গে যৌথভাবে ১৪ দিনের একটি মিশন শেষে ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়।
চাঁদের উত্তর-পূর্ব দিকের ‘মারে ক্রিসিয়াম’-এর একটি আগ্নেয়গিরি অঞ্চল ‘মন্স ল্যাটরেইলে’ ২ মার্চে অবতরণ করে বাণিজ্যিক ল্যান্ডারটি। নাসা বাণিজ্যিক পেলোড অপারেটরদের জন্য ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর লক্ষ্য হলো খরচ কমানো এবং ২০২৭ সালে চাঁদে মানুষ পাঠানোর উদ্দেশ্যে তৈরি ‘আর্টেমিস’ প্রোগ্রামকে সহায়তা করা।
প্রকাশিত দুটি ছবিতে পশ্চিম দিকে দৃশ্যমান পৃথিবী ও শুক্রগ্রহের সঙ্গে চাঁদের দিগন্তে আলোর বিস্তার দেখা যাচ্ছে। ছবিগুলোতে সূর্য প্রায় অর্ধেক ডুবে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে।
নাসার ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল কেয়ার্নস বলেন, “সূর্যাস্তের এবং দিগন্তে রাতের আঁধারে চলে যাওয়ার এমন উচ্চ-সংজ্ঞা সম্পন্ন ছবি এই প্রথম।” তিনি আরও বলেন, “ছবিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই এতে চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন এই ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে অন্যান্য তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে তুলনা করবেন এবং তাদের গবেষণা থেকে নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেষ্টা করবেন।”
১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মিশনে চাঁদে পা রাখা শেষ দুই ব্যক্তির একজন নভোচারী ইউজিন সারনান প্রথম ‘লুনার হরাইজন গ্লো’ পর্যবেক্ষণ করেন। পরবর্তীকালে ধারণা করা হয়, চাঁদের ক্ষীণ বায়ুমণ্ডলে থাকা অতি ক্ষুদ্র ধূলিকণা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আলো দেয়। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, এই কণাগুলো আসলে ভেসে বেড়ায়।
ব্লু ঘোস্ট ১৪ মার্চে একটি পূর্ণগ্রাস গ্রহণেরও ছবি তোলে, যখন পৃথিবী চাঁদের দিগন্ত থেকে সূর্যকে ঢেকে দিয়েছিল।
২৫ জানুয়ারি একটি ‘স্পেসএক্স ফ্যালকন’ রকেট প্রায় ২.৮ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে একটি ছোট আকারের ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করে। ল্যান্ডারটি দেখতে একটি জলহস্তীর মতো।
ব্লু ঘোস্ট-এ ছিল একটি চন্দ্রপৃষ্ঠের মৃত্তিকা বিশ্লেষক, তেজস্ক্রিয়তা-সহনশীল কম্পিউটার এবং বিদ্যমান গ্লোবাল স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করে চাঁদে পথ খুঁজে বের করার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মতো বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম।
ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের প্রধান নির্বাহী জেসন কিম বলেন, “প্রথম সফল বাণিজ্যিক চন্দ্র অবতরণ করতে পেরে আমাদের কোম্পানি অত্যন্ত গর্বিত। আমি মনে করি, ফায়ারফ্লাই ও ব্লু ঘোস্টের এই ঐতিহাসিক মিশন পাঠ্যপুস্তকে নতুন একটি অধ্যায় যোগ করবে এবং এটি মানবজাতির অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
উল্লেখ্য, এই মাসের শুরুতে চাঁদে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম বহনকারী একটি বেসরকারি কোম্পানির মহাকাশযান অবতরণে ব্যর্থ হয়। ‘ইনটুইটিভ মেশিনস’-এর পাঠানো ‘এথেনা’ নামের একটি প্রোব অবতরণের সময় উল্টে যায় এবং মিশনটি বাতিল করা হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান