বাবা-হারা সমাজে ‘বিষাক্ত প্রভাবকদের’ বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন সাউথগেট!

গ্যারেথ সাউথগেট: তরুণ সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ‘ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারকারীদের’ কুপ্রভাব
সাবেক ইংলিশ ফুটবল দলের ম্যানেজার স্যার গ্যারেথ সাউথগেট সম্প্রতি এক ভাষণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ‘ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারকারীদের’ ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন।

এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সমাজে আদর্শ পিতার স্থান দখল করছে এবং যুবকদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বাড়াচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রিচার্ড ডিম্বলবি লেকচারে দেওয়া ভাষণে সাউথগেট আরও প্রশ্ন তুলেছেন, খেলাধুলায় সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে শুধু ট্রফি জয়কেই দেখা উচিত কিনা।

১৯৯৫ সালে প্রয়াত প্রখ্যাত ব্রডকাস্টার রিচার্ড ডিম্বলবির স্মরণে প্রতি বছর এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এবার এই বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘সুন্দর খেলা: তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা তৈরি’।

বক্তৃতায় সাউথগেট উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে জার্মানির বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিস করার ঘটনাটি কীভাবে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে তিনি বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল এবং এমনকি কারাগারেও গিয়েছেন, যেখানে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। সাউথগেট বলেন, “একটি বিষয় আছে যা আমাকে ক্রমাগতভাবে জানানো হচ্ছে, এবং সেটি জানাচ্ছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।

তারা বলছেন, তরুণ ছেলেরা কষ্ট পাচ্ছে, একাকিত্ব অনুভব করছে। তারা তাদের পুরুষত্ব নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে এবং সমাজের বৃহত্তর পরিসরে নিজেদের স্থান খুঁজে নিতে সংগ্রাম করছে।”

সাউথগেটের মতে, সমাজে এখন ভালো অভিভাবক বা পথপ্রদর্শকের অভাব দেখা যাচ্ছে, যা যুবকদের মধ্যে আবেগ প্রকাশে অনীহা তৈরি করছে। তিনি আরও বলেন, “তারা দিকনির্দেশনার জন্য অনলাইনে বেশি সময় ব্যয় করে এবং গেমিং, জুয়া খেলা ও পর্নোগ্রাফির মতো খারাপ পথে আকৃষ্ট হচ্ছে।

এই শূন্যতা পূরণ করছে নতুন ধরনের কিছু রোল মডেল, যাদের তরুণদের ভালো করার কোনো আগ্রহ নেই। এরা স্বার্থপর, ধূর্ত এবং ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারকারী, যাদের একমাত্র লক্ষ্য নিজেদের ফায়দা হাসিল করা। তারা তরুণদের মিথ্যা ধারণা দেয় যে, টাকা বা ক্ষমতা দিয়ে সাফল্য মাপা হয়, কোনো আবেগ দেখানো উচিত নয় এবং নারীসহ পুরো পৃথিবী তাদের বিরুদ্ধে।

আমাদের তরুণদের জন্য তাদের থেকে ভালো দৃষ্টান্ত আর কিছু হতে পারে না।”
ইউরো ২০২৪-এর ফাইনালে স্পেনের কাছে হারের পর ইংল্যান্ডের ম্যানেজারের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো সাউথগেট সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আরও বেশি নেতা তৈরি করতে যারা সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।

তিনি হ্যারি কেইন এবং জর্ডান হেন্ডারসনের উদাহরণ টেনে বলেন, এই খেলোয়াড়রা জাতীয় দলের প্রতি নতুন করে গর্ব জাগাতে সাহায্য করেছেন। “আমি চেয়েছিলাম অন্যরা তাদের অনুসরণ করুক।

আমরা এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে চেয়েছি যেখানে তরুণ খেলোয়াড়দের স্বাগত জানানো হবে, তাদের ভুলকে উপহাস না করে বরং শেখার অংশ হিসেবে দেখা হবে। সমাজে এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যারা তরুণদের জন্য সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। আমাদের দেখাতে হবে, চরিত্রের গুরুত্ব সম্মানের চেয়ে অনেক বেশি, এবং অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

খেলাধুলায় সাফল্যের সংজ্ঞা নিয়েও কথা বলেছেন সাউথগেট। তিনি বলেন, “ফুটবলে আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সাফল্য শুধু চূড়ান্ত স্কোরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি কোনো সরলরেখা নয়, বা কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্তও নয়।

সবাই ট্রফি জিতবে না, সবাই তাদের কর্মজীবনে শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে না। তবে প্রত্যেকেই এমন জীবন যাপন করতে পারে যেখানে তারা ক্রমাগত উন্নতির চেষ্টা করবে। তারা ফিরে তাকাতে পারবে এবং বলতে পারবে: আমি আমার সেরাটা দিয়েছি, আমি নিজের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলাম এবং আমি একটি পার্থক্য তৈরি করেছি। এটাই আসল সাফল্য।”

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *