বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোমর ব্যথার চিকিৎসার বিষয়ে একটি নতুন সংবাদ নিবন্ধ লিখছি।
কোমর ব্যথার চিকিৎসায় প্রচলিত পদ্ধতির কার্যকারিতা কতটুকু? গবেষণায় নতুন তথ্য।
কোমর ব্যথা, যা বিশ্বের অনেক মানুষের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, এর সমাধানে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ত্রোপচার ছাড়া কোমর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত অনেক পদ্ধতির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সামান্য উপশম দিতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হয় তেমন কোনো উপকার করে না, নয়তো সামান্যই সাহায্য করে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা আরও বাড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি চিকিৎসা বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি বিশ্বের ৪৪টি দেশের রোগীদের ওপর পরিচালিত হওয়া ৩০১টি ভিন্ন পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। গবেষণাটিতে কোমর ব্যথার ৫৬ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অথবা তাদের মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয়।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউরোসায়েন্স রিসার্চ অস্ট্রেলিয়ার (Neuroscience Research Australia) ‘পেইন ইমপ্যাক্ট সেন্টার’-এর ড. এইডান ক্যাশিন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, কোমর ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকরী। তীব্র কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে, নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) বেশ কার্যকর।
অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদী কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ব্যায়াম, স্পাইনাল ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, টেপিং, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ এবং টিআরপিভি১ (TPRV1) গ্রুপের ওষুধগুলো কিছু ক্ষেত্রে উপকার করতে পারে।
তবে, কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি কোমর ব্যথার সমাধানে কোনো কাজ করে না। যেমন – তীব্র কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে ব্যায়াম, গ্লুকোকর্টিকয়েড ইনজেকশন এবং প্যারাসিটামল সেবন তেমন কোনো ফল দেয় না।
দীর্ঘমেয়াদী কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যানেস্থেটিকের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য কোনো উপকার বয়ে আনে না।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, কিছু চিকিৎসার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদের মধ্যে রয়েছে, ব্যায়াম, প্যারাসিটামল, গ্লুকোকর্টিকয়েড ইনজেকশন, অ্যানেস্থেটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ।
অন্যদিকে, মালিশ, ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং পায়ের জন্য বিশেষ অর্থোটিকস ব্যবহার করলে ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসতে পারে। গরম সেঁক, আকুপাংচার, স্পাইনাল ম্যানিপুলেশন এবং ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন (TENS) মাঝারি ধরনের ব্যথা কমাতে পারে।
অস্টিওপ্যাথিক চিকিৎসা এবং মাংসপেশি শিথিল করার ওষুধ ও NSAIDs একসঙ্গে ব্যবহার করলে সামান্য উপশম পাওয়া যেতে পারে।
তবে, দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এগুলো হলো – এক্সট্রাকোরপোরিয়াল শকওয়েভ এবং কোঁচিসিন নামক প্রদাহবিরোধী ওষুধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোমর ব্যথা একটি জটিল সমস্যা এবং এর কারণ বিভিন্ন হতে পারে। তাই, চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করা জরুরি।
ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং কোনো চিকিৎসা পরামর্শ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
যেকোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার জন্য একজন qualified চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: The Guardian