বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েলের (George Orwell) জীবনের গল্প, তাঁর পালিত পুত্র রিচার্ড ব্লেয়ারের (Richard Blair) চোখে।
বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েল, যাঁর আসল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার, তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি ‘এনিম্যাল ফার্ম’ (Animal Farm) এবং ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ (Nineteen Eighty-Four)-এর মাধ্যমে মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছেন। কিন্তু এই লেখকের ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ভাবনাগুলো অনেকের কাছেই অজানা।
সম্প্রতি, তাঁর পালিত পুত্র রিচার্ড ব্লেয়ারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে অরওয়েলের জীবনের নানা দিক, যা পাঠকদের কাছে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
রিচার্ড ব্লেয়ার, মাত্র তিন সপ্তাহ বয়সে দত্তক পুত্র হিসেবে অরওয়েলের পরিবারে আসেন। তাঁর পালিতা মা, অরওয়েলের স্ত্রী আইলিন, এক দুর্ঘটনায় মারা যান যখন রিচার্ডের বয়স মাত্র নয় মাস।
এরপর, বন্ধুদের ধারণা ছিল, অরওয়েল হয়তো রিচার্ডকে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু না, ১৯৪০-এর দশকে শিশুদের প্রতি বাবার দায়িত্ব পালনে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন জর্জ অরওয়েল।
অরওয়েল ও আইলিন দীর্ঘদিন ধরে সন্তান চেয়েছিলে। কিন্তু শারীরিক কারণে তাঁরা মা-বাবা হতে পারেননি। অবশেষে, তাঁরা একটি শিশুকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
রিচার্ড ব্লেয়ার সেই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ তাঁদের জীবনে আসেন। রিচার্ড জানান, “বাবা (অরওয়েল) সবসময় চেয়েছিলে তাঁর একটি পরিবার হোক। আর আমিই ছিলাম তাঁর পরিবার।”
সাক্ষাৎকারে রিচার্ড ব্লেয়ার তাঁর বাবার চা বানানোর একটি বিশেষ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন, যা আজও অনেকের কাছে বেশ পরিচিত।
অরওয়েলের জীবন ছিল বৈচিত্র্যে ভরা। একদিকে তিনি ছিলেন স্বৈরাচারী শাসনের কড়া সমালোচক, অন্যদিকে ব্যক্তিজীবনে ছিলেন কিছু অদ্ভুতুড়ে স্বভাবের মানুষ।
দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করা এই লেখক সমাজের উঁচু শ্রেণির প্রতি ঘৃণা পোষণ করতেন। আবার তিনিই ছিলেন সাধারণ মানুষের খুব কাছের একজন।
রিচার্ড ব্লেয়ার জানান, তাঁর বাবা ছিলেন খুবই মিশুক এবং বন্ধুপ্রিয় একজন মানুষ। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন নারীর প্রতি আকৃষ্ট হতেন।
অরওয়েলের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো তাঁর লেখালেখির সময়। তিনি তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর স্কটল্যান্ডের একটি নির্জন দ্বীপে কাটিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ‘নাইনটিন এইটি ফোর’-এর মতো বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেন।
রিচার্ড ব্লেয়ার বলেন, সেই সময়টা বাবা ও ছেলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছিল এক স্বর্গরাজ্য। তাঁরা একসঙ্গে মাছ ধরতেন এবং নানা ধরনের খেলাধুলা করতেন।
একদিন, অরওয়েল যখন তাঁর ছেলের জন্য কাঠের খেলনা বানাচ্ছিলেন, তখন অসাবধানতাবশত রিচার্ড একটি চেয়ার থেকে পরে যান এবং তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে।
এছাড়াও, একবার তাঁরা সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলেন।
অরওয়েল তাঁর ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্য ভালো না থাকায়, তিনি সবসময় ছেলেকে নিজের থেকে দূরে রাখতে চাইতেন।
কারণ, তিনি ভয় পেতেন, তাঁর টিবি (TB) রোগ হয়তো তাঁর ছেলের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে।
১৯৪৯ সালে, অরওয়েলকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯৫০ সালে, তাঁর মৃত্যুর খবর আসে।
তখন রিচার্ডের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর।
রিচার্ড ব্লেয়ার জানান, বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর বাবার সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচিত হন।
তিনি বলেন, “আমি প্রথমে ‘এনিম্যাল ফার্ম’ পড়েছিলাম, এরপর ‘নাইনটিন এইটি ফোর’। ‘এনিম্যাল ফার্ম’ আমার ভালো লেগেছিল। কিন্তু ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ বুঝতে আমার বেশ কঠিন লেগেছিল।”
বাবার মৃত্যুর পর, রিচার্ড ব্লেয়ার তাঁর বাবার সাহিত্যকর্মের দেখাশোনা করেন এবং তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
রিচার্ড ব্লেয়ার বর্তমানে তাঁর বাবার সাহিত্যকর্মের একজন একনিষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যান এবং তাঁর বাবার জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান