নিউ ইয়র্কের কুইন্স মিউজিয়ামে স্থাপিত বিশাল এক স্থাপত্য মডেল, যা নব্বইয়ের দশকের নিউ ইয়র্ক শহরকে জীবন্ত করে তোলে। ‘প্যানোরামা অফ দ্য সিটি অফ নিউ ইয়র্ক’ নামের এই মডেলটি তৈরি করা হয়েছে ১:১,২০০ স্কেলে, যা ৯,৩৩৫ বর্গফুটের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্থাপত্য মডেল, যেখানে হাতে তৈরি প্রায় ৮ লক্ষ ৯৫ হাজার বিল্ডিং রয়েছে। এই মডেলটি যেন এক টুকরো অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় দর্শকদের।
শহর পরিকল্পনা ও উদ্ভাবনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে ১৯৬৪ সালের নিউ ইয়র্ক বিশ্ব মেলায় জনসাধারণের জন্য প্রথম উন্মোচন করা হয় এই মডেলটি। সেই সময় এর নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় ৬ লক্ষ ৭২ হাজার মার্কিন ডলার, যা আজকের দিনে প্রায় ৭ কোটি টাকার সমান।
পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এর সর্বশেষ সংস্কার করা হয়, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার বা ২২ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
মডেলটিতে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের উচ্চতা ১৫ ইঞ্চি এবং স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উচ্চতা ২ ইঞ্চির সামান্য কম। এমনকি পিঁপড়েরাও যেন এই মডেলের মানুষের চেয়ে বড়!
ব্রাস দিয়ে তৈরি সেতু এবং অ্যাক্রিলিক দিয়ে তৈরি গাড়ির সারি, বাস, ট্রেন ও সাবওয়ে এর মডেলটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
কুইন্স মিউজিয়ামের আর্কাইভস এবং কালেকশন বিভাগের সহকারী পরিচালক লিন ম্যালিশেভস্কি জানান, মডেলটি তৈরিতে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে একশ জনের বেশি কর্মী অবিরাম কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, “এখানে হেঁটে গেলে মাঝে মাঝে গা কাঁটা দিয়ে ওঠে, কারণ এটি স্বপ্ন, আশা, পরিবার, সংগ্রাম, উত্তেজনা—মানবীয় অনুভূতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।”
তবে সময়ের সাথে সাথে এই মডেলের অনেক কিছুই বদলে গেছে। ১৯৯২ সালের পর এতে আর কোনো নতুন সংস্করণ যুক্ত করা হয়নি।
বর্তমানে ডিজিটাল মডেলিংয়ের চাহিদা বাড়ায় এমন হাতে গড়া মডেল তৈরির কারিগর পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও মডেলটির ঐতিহাসিক নির্ভুলতা এটিকে বিশেষত্ব এনে দিয়েছে।
মডেলটির নির্মাতাদের একজন, টম জারো, যিনি ১৯৯২ সালের সংস্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, জানান মূল কাঠামোটি প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড ওজনের এবং এটিকে একবারই স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, সেই সময়ে হাতে কলমে প্রতিটি জানালা ও দরজার সূক্ষ্ম কারুকার্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এমনকি স্পঞ্জ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল অসংখ্য গাছপালা।
জারো বলেন, “তখন যদি থ্রিডি প্রিন্টার থাকত, তাহলে সবকিছুই সহজে করা যেত, কিন্তু সবকিছুই হাতে করতে হয়েছে।”
বর্তমানে, এই মডেলটিতে আধুনিক আলো এবং ডিজিটাল সাবওয়ে লাইন যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল নাগাদ জাদুঘরটি এর আলো এবং শব্দ ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ করতে পারবে।
মডেলটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে অন্তত দুবার এর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। এই বিশাল কাজটি করতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে।
দর্শকদের জন্য একটি বিশেষ প্রোগ্রামও চালু করা হয়েছে, যেখানে তারা মডেলের কোনো একটি অংশ, যেমন—তাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, রেস্টুরেন্ট, পার্ক—ইত্যাদি দত্তক নিতে পারেন।
এর মাধ্যমে তারা মিউজিয়ামকে বার্ষিক অনুদান দিতে পারেন এবং মডেলের সেই অংশের মালিক হতে পারেন।
লিন ম্যালিশেভস্কি বলেন, “এই মডেলটি মানুষের ইতিহাস, নস্টালজিয়া এবং স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। এটি দেখায় যে আমরা একে অপরের থেকে খুব বেশি দূরে নই, এমনকি আপনি যদি আপনার এলাকা বা শহর ছেড়ে না যান, তবুও।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন