পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় নারীদের মধ্যে ‘তাবা’ নামক এক প্রকার তামাক পণ্যের ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির অনেক নারী গোপনভাবে এই তামাক ব্যবহার করেন।
স্থানীয়ভাবে ‘তাবা’ শব্দটি তামাকের গুঁড়োকে বোঝায়। ঐতিহ্যগতভাবে এটি ধূমপান, নাকে টানা বা চিবানোর মাধ্যমে সেবন করা হলেও, বর্তমানে এর ব্যবহার ভিন্ন রূপ নিয়েছে।
গাম্বিয়ার নারীদের মধ্যে ‘তাবা’ ব্যবহারের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেকে যৌন আনন্দ লাভের আশায় এবং কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা সমাধানের জন্য এটি ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, তাবা ব্যবহার করলে যৌনাঙ্গের সংক্রমণ, মাথাব্যথা, এমনকি মৃগীরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও দূর হয়।
যদিও এসব দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং চিকিৎসকরা ‘তাবা’ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তারা বলছেন, এই তামাক ব্যবহারের ফলে শরীরে নানা ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেমন—ত্বকের জ্বালাপোড়া, সংক্রমণ, চুলকানি, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, এমনকি যৌন সম্পর্কের সময় রক্তপাত হতে পারে। চিকিৎসকরা আরও বলছেন, ‘তাবা’-তে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকতে পারে।
গর্ভাবস্থায় এর ব্যবহারের ফলে অপরিণত বাচ্চার জন্ম, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া এবং মৃত সন্তান জন্মদানের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
কানাইফিং জেনারেল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কারামো সুওয়ারেহ এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘তাবা’ ব্যবহারের কারণে নারীদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এটি যোনি পথের স্বাভাবিক পিএইচ (pH) ব্যাহত করে এবং মহিলাদের যৌনরোগের (এসটিআই) ঝুঁকিতে ফেলে।
গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী লামিন সামাতেহ্ স্থানীয় ভাষায় তাবার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে নারীদের এটি বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও তাবার কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করছে। তাদের মতে, কোনো নারীরই এই ধরনের ক্ষতিকর প্রথা অনুসরণ করার জন্য চাপ অনুভব করা উচিত নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, গাম্বিয়ার নারীদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশ ‘তাবা’ ব্যবহার করেন। ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়, এছাড়া শহরের চেয়ে গ্রামের নারীরা এটি বেশি ব্যবহার করেন।
গাম্বিয়ায় তামাক ব্যবহারের ওপর কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও, তাবার ব্যবহার এখনো নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। যদিও দেশটির সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
গাম্বিয়ার বাজারে ‘তাবা’ প্রকাশ্যে বিক্রি হয় না। গোপনভাবে এটি বিক্রি হয় এবং এর ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী।
একজন বিক্রেতা জানান, তিনি এক চা চামচ তাবা ৫ ডালসি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ টাকা) দামে বিক্রি করেন।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ‘তাবা’ ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে নারীদের সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ এর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা