যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ফের ধাক্কা! মূল্যস্ফীতি রুখতে পারবে তো ফেডারেল রিজার্ভ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) বেশ কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল, কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সেই অর্জিত সাফল্য এখন হুমকির মুখে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে একদিকে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় ‘স্ট্যাগফ্লেশন’, যা একটি উদ্বেগের কারণ।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাদের বুঝতে হবে, ট্রাম্পের আকস্মিক নীতির কারণে অর্থনীতির ওপর কেমন প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

এমনকি আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে, এমন ধারণা তাদের মধ্যে বদ্ধমূল হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল সম্ভবত আগামী বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবেন।

কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈঠকে কর্মকর্তাদের দেওয়া পূর্বাভাসে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর ইঙ্গিত থাকতে পারে। পাওয়েলকে এখন উদ্বেগে থাকা আমেরিকানদের বোঝাতে হবে, ফেডারেল রিজার্ভ কীভাবে এই দ্বিমুখী সংকট মোকাবেলা করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক একদিকে যেমন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। গত কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।

বিশেষ করে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠছে, যার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো দেশটির ভোক্তারা।

কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের মধ্যে কেনাকাটার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রি কমে যাওয়া এবং ভোক্তাদের আস্থা হ্রাস পাওয়ার মতো ঘটনাগুলো অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়া। যদি মানুষ মনে করে, ভবিষ্যতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলবে, তাহলে তারা তাদের ব্যয় পরিকল্পনা পরিবর্তন করবে।

এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকানদের ধারণা, আগামী এক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৪.৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

অন্যদিকে, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৩.৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ যদি মনে করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকবে অথবা দীর্ঘমেয়াদী মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা বাড়ছে, তাহলে সুদের হার বাড়ানোর মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে বেকারত্ব বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ফেডারেল রিজার্ভ বুধবার তাদের বৈঠকের ফলাফল ঘোষণা করবে এবং এর পরেই ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *