কানাডার অন্টারিও প্রদেশের পুলিশ বাহিনী সম্ভবত ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করছে, এমনটাই উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাব এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে, যা সাইবার অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ভিত্তিক প্যারাগন সলিউশনস নামক একটি কোম্পানির সঙ্গে অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশের “সম্ভাব্য যোগসূত্র” থাকতে পারে। প্যারাগন সামরিক গ্রেডের গ্রাফাইট নামের স্পাইওয়্যার তৈরি করে, যা সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়।
সিটিজেন ল্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কানাডার অন্টারিও প্রদেশের কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্যারাগনের প্রযুক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে, যাদের মধ্যে একটির ঠিকানা অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশের (ওপিপি) মতোই।
যদিও প্যারাগন সলিউশনস তাদের গ্রাহকদের নাম প্রকাশ করে না, তবে তারা দাবি করেছে, তাদের তৈরি করা স্পাইওয়্যার গুরুতর অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনের কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে, সম্প্রতি এই স্পাইওয়্যার ইতালির একজন সাংবাদিক এবং অভিবাসন-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ইতালীয় সরকার স্বীকার করেছে, তারা প্যারাগনের গ্রাহক ছিল এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর কোম্পানিটি ইতালির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে।
কানাডায় পুলিশের স্পাইওয়্যার ব্যবহারের বিষয়টি নতুন নয়। এর আগে, ২০২২ সালে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) স্বীকার করে যে তারা মোবাইল ফোনে আড়ি পাততে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে।
তারা জানিয়েছিল, গুরুতর অপরাধের তদন্তে, যখন অন্য কোনো প্রযুক্তি কাজ করে না, তখনই কেবল এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
সিটিজেন ল্যাবের নতুন প্রতিবেদনে কানাডার সরকারি সংস্থাগুলোর স্পাইওয়্যার ব্যবহারের আরও বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, অন্টারিও প্রদেশের পুলিশ বাহিনীতে স্পাইওয়্যারের ব্যবহার বাড়ছে।
আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের একটি তদন্তে ওপিপি একটি নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করে, যা আরসিএমপি-ও ব্যবহার করত। এর মাধ্যমে তারা মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে ব্যক্তিগত কথোপকথন রেকর্ড করত।
এছাড়াও, টরন্টোর একটি আদালত ২০২৩ সালের রায়ে উল্লেখ করেছে, টরন্টো পুলিশ এবং ইয়র্ক আঞ্চলিক পুলিশ একটি যৌথ তদন্তে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের কথা বিবেচনা করেছিল। তারা “অন-ডিভাইস ইনভেস্টিগেটিভ টুল” (ওডিআইটি) নামে পরিচিত একটি নজরদারি সরঞ্জামের কথাও বিবেচনা করে।
সিটিজেন ল্যাব কর্তৃক প্রাপ্ত ২০২৩ সালের একটি সার্চ ওয়ারেন্টেও দেখা যায়, টরন্টো পুলিশ সার্ভিস (টিপিএস) একটি অজানা উৎস থেকে ওডিআইটি সংগ্রহ করেছে এবং তারা এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেলুলার যোগাযোগে আড়ি পাততে চাইছে।
সিটিজেন ল্যাবের একজন সিনিয়র গবেষক কেট রবার্টসন বলেন, “এই অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, কানাডায় স্পাইওয়্যার প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সরকারের কাছে এই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা দরকার এবং গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আইন সংস্কার করা জরুরি।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান