আইসিসিকে সতর্ক করলেন ইতালির মানবাধিকার কর্মী, স্পাইওয়্যার হামলার শিকার!

ইতালির একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গোপন তথ্য সরবরাহ করছিলেন, তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাব নামের একটি গবেষণা সংস্থা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

**গোয়েন্দাগিরির শিকার মানবাধিকার কর্মী**

ডেভিড ইয়াম্বিও নামের ওই কর্মী ‘রেফিউজিস ইন লিবিয়া’ নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি জানান, আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগের সময় তাঁর ফোন নজরদারির শিকার হয়। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ২০২৪ সালের জুন মাসে এই ঘটনা ঘটেছিল।

ইয়াম্বিও এই বিষয়ে আইসিসিকে সতর্ক করেছেন এবং আদালতের সদস্যদের ফোন পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আইসিসির কৌঁসুলি কার্যালয় এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি, কারণ বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।

**সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন**

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, কোনো সরকারি সংস্থা সামরিক গ্রেডের স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে আইসিসির কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে কিনা। কারণ, ইয়াম্বিও’র মতো মানবাধিকার কর্মীরা নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের হয়ে কাজ করেন এবং তাঁদের গোপন তথ্য সংগ্রহ করেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও এই ঘটনায় সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। কারণ, এর আগে জানা গিয়েছিল, দেশটির কয়েকজন সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টের ফোনে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

আগে, ইতালির সরকার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত লিবিয়ার নাগরিক ওসামা নাজিমকে মুক্তি দিয়েছিল। নাজিম বর্তমানে ত্রিপোলির মিতিগা শহরের একটি ডিটেনশন সেন্টারের পরিচালক। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই কেন্দ্রটিতে রাজনৈতিক বন্দী, অভিবাসী এবং শরণার্থীদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগ এনেছে।

**স্পাইওয়্যার প্রস্তুতকারক এবং ভুক্তভোগী**

সিটিজেন ল্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াম্বিওর সহযোগী এবং পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুও হ্যাকিং সফটওয়্যারের শিকার হয়েছেন। এই সফটওয়্যারটি সাধারণত সন্ত্রাস তদন্ত এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

গবেষকরা এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি কোন ধরনের স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে তাঁদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই হ্যাকিং সফটওয়্যার তৈরি করেছে ইসরায়েলি কোম্পানি প্যারাগন সলিউশনস, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, প্যারাগন সলিউশনস-এর স্পাইওয়্যার, যা ‘গ্রাফাইট’ নামে পরিচিত, তা ফোনের মেসেজ এবং কথোপকথনসহ ব্যবহারকারীর সমস্ত তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম।

অ্যাপল নভেম্বরে ইয়াম্বিওকে সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে। এরপর সাইবার হাব-এএম এবং সিটিজেন ল্যাবের বিশেষজ্ঞরা তাঁর ফোন পরীক্ষা করেন। অ্যাপল পরে জানায়, তারা একটি নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে, যা ইয়াম্বিওর ওপর চালানো আক্রমণের কারণ ছিল।

তারা তাদের আইওএস ১৮ সংস্করণে এই সমস্যার সমাধান করেছে।

সিটিজেন ল্যাবের গবেষকদের মতে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর এবং ইসরায়েলের মতো দেশগুলোও প্যারাগনের গ্রাহক হতে পারে।

প্যারাগন সলিউশনস অবশ্য দাবি করেছে, তারা তাদের ব্যবহারকারীদের সাংবাদিক বা সুশীল সমাজের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করার অনুমতি দেয় না।

স্পাইওয়্যার ব্যবহারের এই ঘটনা ইউরোপেও ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য হান্না নিউম্যান। তিনি একে ‘স্পাইওয়্যার অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এর প্রতিকারের জন্য আইন ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *