চিমামান্ডা এনগোজি আদিচি: বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক নাইজেরীয় সাহিত্যিক।
চিমামান্ডা এনগোজি আদিচি, একজন নাইজেরীয় লেখক, যিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর উপন্যাসগুলো শুধু সাহিত্য সমালোচকদেরই মন জয় করেনি, বরং সাধারণ পাঠকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
২০১৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি, তিনি তাঁর নতুন উপন্যাস ‘ড্রিম কাউন্ট’ নিয়ে ফিরে এসেছেন, যা কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে।
আদিচির লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো যুদ্ধ, নারী অধিকার, আত্মপরিচয়, শোক, এবং সাংস্কৃতিক জটিলতা। তাঁর সাহিত্যকর্মগুলোতে আফ্রিকার মানুষের জীবনযাত্রা, ঐতিহ্য, এবং সমাজের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হাফ অফ এ ইয়েলো সান’, ‘দ্য ডেঞ্জার অফ আ সিঙ্গেল স্টোরি’, ‘পার্পল হাইবিসকাস’, ‘আমেরিকানা’, ‘উই শুড অল বি ফেমিনিস্টস’, এবং ‘নোটস অন গ্রিফ’।
আদিচির দ্বিতীয় উপন্যাস ‘হাফ অফ এ ইয়েলো সান’-এ ১৯৬০ সালের নাইজেরিয়ার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংঘটিত বিয়াফ্রা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসে দেখা যায়, একজন গণিত শিক্ষক, তাঁর লন্ডন-প্রবাসী প্রেমিকা, এবং এক কিশোর গৃহকর্মীর জীবন।
যুদ্ধের বিভীষিকা এবং এর ফলস্বরূপ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লেখকের লেখায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
আদিচির একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ হলো ‘দ্য ডেঞ্জার অফ আ সিঙ্গেল স্টোরি’। এই প্রবন্ধে তিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনার একতরফা বর্ণনার বিপদ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে, কোনো ব্যক্তির গল্প বলার ক্ষমতা হলো সেই গল্পকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষমতা।
এর মাধ্যমে মানুষের জটিলতা এবং মর্যাদাকে খাটো করা হয়।
আদিচির প্রথম উপন্যাস ‘পার্পল হাইবিসকাস’-এ ১৫ বছর বয়সী কাম্বিলি নামের এক কিশোরীর বেড়ে ওঠার গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাইজেরিয়ার সামরিক শাসনের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসটিতে ধর্ম, স্বাধীনতা, এবং পারিবারিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
‘আমেরিকানা’ আদিচির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ। এই উপন্যাসে একজন তরুণী ইফেমেলুর গল্প বলা হয়েছে, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় এবং সেখানে বর্ণবাদের অভিজ্ঞতা লাভ করে।
নারীবাদ নিয়ে আদিচির বক্তব্য বর্তমান সময়ের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। তাঁর ‘উই শুড অল বি ফেমিনিস্টস’ প্রবন্ধটি নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্য এবং নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
আদিচির লেখার ভাষাগত মাধুর্য এবং গল্প বলার ধরন পাঠকদের আকৃষ্ট করে। তাঁর চরিত্রগুলো জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যায়, যা পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করে।
চিমামান্ডা এনগোজি আদিচির সাহিত্যকর্ম শুধু নাইজেরিয়ার মানুষের জীবনচিত্রই তুলে ধরে না, বরং বিশ্বজুড়ে মানুষের চিন্তা ও অনুভূতির সাথে সংযোগ স্থাপন করে। তাঁর লেখা আমাদের সমাজে নারী, পুরুষ এবং মানুষের সম্পর্ককে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান