রাজনীতি কি কেড়ে নিচ্ছে আপনার ঘুম? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ!

রাজনীতি ও উদ্বেগে ঘুমের সমস্যা? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি

বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কিংবা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। উদ্বেগের কারণে অনেকের রাতে ঘুম আসে না, অথবা মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে যায়।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের কার্যকারিতা কমে যায়, দেখা দেয় মানসিক অবসাদ। সম্প্রতি, ঘুম বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা স্বাভাবিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্বেগের কারণে অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া (Insomnia) একটি সাধারণ সমস্যা। অনিদ্রা হলে সহজে ঘুম আসতে চায় না, গভীর ঘুম হয় না এবং মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে যায়।

দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে। হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাও এর কারণে দেখা দিতে পারে।

নিউইয়র্ক সিটির ওয়েইল কর্নেল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন, নিউরোলজি এবং জেনেটিক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ঘুম গবেষক ড. আনা ক্রিগারের মতে, “প্রত্যেকেরই অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে এবং কিছু বিষয় সেই সীমা অতিক্রম করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

ব্যক্তিগত, পেশাগত, পরিবেশগত এমনকি রাজনৈতিক চাপও এর কারণ হতে পারে।”

ওহাইও’র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের স্লিপ ডিসঅর্ডার ক্লিনিকের মনোবিজ্ঞানী মিশেল ডেরাপ বলেন, “আগেও রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সময় অনিদ্রার সমস্যা বেড়েছে।

দুর্বল অথবা যাদের ঘুমের সমস্যা মাঝে মাঝে হয়, তাদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি দেখা যায়।”

তবে, যারা ভালোভাবে ঘুমান, তাদের উপর উদ্বেগের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম থাকে বলে জানান ড. ক্রিগার। যাদের ঘুম আসতে সমস্যা হয় অথবা রাতে অল্প সময়ের জন্য ঘুম ভেঙে যায়, তাদের ক্ষেত্রে খবর থেকে পাওয়া চাপ খারাপ ঘুমের কারণ হতে পারে।

বয়স্ক ব্যক্তি, নারী এবং যাদের পরিবারে অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি বেশি।

ইউনিভার্সিটি অফ উটাহ-এর অধ্যাপক ও স্লিপ বিশেষজ্ঞ জেনিফার মুন্ডট বলেন, “অনিদ্রা হলো পরিবর্তন এবং উদ্বেগের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এমনকি ভালো কোনো পরিবর্তনের কারণেও এটি হতে পারে।

যেমন – বিয়ে, নতুন চাকরি বা সন্তানের জন্ম – এই বিষয়গুলোও আমাদের জীবনে চাপ সৃষ্টি করে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।”

ঘুমের সমস্যা সমাধানে কিছু কার্যকরী উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। সবার প্রথমে, রাতে খবর দেখা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।

ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। ঘুমানোর আগে চা-কফি বা অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

কারণ এগুলো ঘুমের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া, ঘুমের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার চিকিৎসায় কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি ফর ইনসোমনিয়া (CBT-I) এর পরামর্শ দেন। সিবিটি-আই ঘুমের সময়সূচী উন্নত করতে এবং ঘুমের সঙ্গে বিছানার একটি ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।

সিবিটি-আই এর মাধ্যমে ঘুমের সময়সূচী নিয়মিত করা যায় এবং ঘুমের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায়।

অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা সমাধানে সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে পারি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *