নিটিং এখন ফ্যাশন! এখনই শুরু করুন, জানুন প্রয়োজনীয় সব!

নতুন করে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে হাতের কাজের সূক্ষ্ম বুনন বা সোয়েটার বোনা। মানসিক শান্তির পাশাপাশি মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক এই শখটি এখন অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যখন মানুষজন প্রযুক্তি নির্ভর জীবন যাপন করছে, তখন এই ধরনের হাতের কাজ মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

এতে খুব বেশি উপকরণেরও প্রয়োজন হয় না, সামান্য কিছু জিনিসপত্র দিয়ে সহজেই শুরু করা যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই আকর্ষণীয় কাজটি শুরু করা যেতে পারে।

শুরু করার জন্য আপনার দরকার হবে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সবার প্রথমে প্রয়োজন সুতা বা উল। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুতা পাওয়া যায়, যেমন – পশমের সুতা, কটন বা লিনেনের সুতা ইত্যাদি।

নতুনদের জন্য পশমের সুতা ব্যবহার করা সহজ। কারণ, এটি নরম এবং সহজে কাজ করা যায়। সুতার প্যাকেটের গায়ে সাধারণত কত নম্বর কাঠি ব্যবহার করতে হবে, সেই নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

শুরুতে, ডাবল নট (DK) ওজনের সুতা ব্যবহার করা ভালো, যা প্রায় ৪ মিমি আকারের কাঠির জন্য উপযুক্ত। এই ধরনের সুতা দিয়ে বোনা কাপড় সহজে বোঝা যায় এবং এটি সহজে হাতে ধরা যায়।

এরপর দরকার হবে বুননের কাঠি বা নিটিং নিডল। সাধারণত দুটি সোজা কাঠি ব্যবহার করে বুনন করা হয়। তবে বৃত্তাকার কাঠিও বেশ জনপ্রিয়।

এই ধরনের কাঠি দিয়ে টুপি, মোজা বা স্কার্ফের মতো গোলাকার জিনিস তৈরি করা যায়। ৪ মিমি বা ৫ মিমি আকারের, ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা বৃত্তাকার কাঠি নতুনদের জন্য আদর্শ।

বাঁশ বা কাঠের কাঠিগুলো সহজে পিছলে যায় না, তাই শুরুতে এগুলো ব্যবহার করা ভালো। ধাতব কাঠিগুলো মসৃণ হওয়ার কারণে দ্রুত বোনা যায়, তবে অভিজ্ঞদের জন্য এটি বেশি উপযোগী। সোজা কাঠির ক্ষেত্রে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা কাঠি ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুতা ও কাঠি ছাড়াও আরও কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে। যেমন – সুতার প্রান্ত লুকানোর জন্য টেপিস্ট্রি নিডল, সেলাই করার জন্য সেলাই কাটার, সেলাইয়ের সময় হিসাব রাখার জন্য সেলাই চিহ্নিতকারী (স্টিচ মার্কার), ফিতা ও ছোট কাঁচি।

বাজারে বুননের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামযুক্ত কিটও কিনতে পাওয়া যায়।

নতুনরা প্রথমে ছোট আকারের নকশা দিয়ে শুরু করতে পারেন। যেমন – একটি স্কার্ফ বা মাফলার। বাজারে বিভিন্ন ধরনের নকশা বা প্যাটার্ন পাওয়া যায়, যা অনুসরণ করে সহজেই বুনন করা যায়।

ইউটিউবেও বুনন শেখার অসংখ্য ভিডিও রয়েছে। সেখানে বুননের প্রাথমিক ধারণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।

বুনন শুরু করার সময় কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন – বোনার সময় সুতা বেশি বা কম টানলে বুননে তারতম্য হতে পারে, তাই সুতা টানটান করে বুনতে হবে।

ভুল হলে চিন্তার কিছু নেই, কারণ বুননের ভুলগুলো সাধারণত সংশোধন করা যায়। বুননের সময় দুটি মৌলিক সেলাই ব্যবহৃত হয় – একটি হলো উল্টো সেলাই এবং অন্যটি সোজা সেলাই।

এই দুটি সেলাই এবং কিছু সাধারণ কৌশল জানা থাকলে অনেক ধরনের ডিজাইন তৈরি করা সম্ভব।

বর্তমানে, বুনন শেখার জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। র‍্যাভেলেরি (Ravelry) তেমনই একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বুনন ও ক্রোশেটের (crochet) বিভিন্ন ডিজাইন ও প্যাটার্ন পাওয়া যায়।

এছাড়াও, ইউটিউবে বুনন সম্পর্কিত অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়, যা নতুনদের জন্য খুবই সহায়ক।

সবশেষে, বুনন একটি চমৎকার শখ, যা মানসিক শান্তির পাশাপাশি সৃজনশীলতা বাড়াতে সহায়ক। তাই, যারা নতুন কিছু করতে চান এবং নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে আগ্রহী, তারা এই কাজটি শুরু করতে পারেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *