মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে চাওয়া মৎস্যজীবীরা পড়েছেন বিপাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্দেশ্যে নেয়া তাদের প্রকল্পগুলোতে ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
এই পরিস্থিতিতে জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের, বিশেষ করে ওয়াশিংটন, মেইন এবং আলাস্কার মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রকল্পগুলো, যেমন— পুরনো ডিজেল ইঞ্জিন পরিবর্তন এবং আধুনিকীকৃত শীতলীকরণ ব্যবস্থা স্থাপনে ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (DOGE) বিভাগের বাজেট কাটছাঁটের কারণে সেই অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে গঠিত এই বিভাগ ফেডারেল সরকারের ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কাজ করে।
জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং মৎস্যজীবীরা। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে নতুন ইঞ্জিন ও সরঞ্জাম কেনার জন্য বড় অঙ্কের ঋণ করেছেন।
কিন্তু সরকারি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
যেমন, ওয়াশিংটনের একজন মৎস্যজীবী রবার্ট বুখমায়ারের কথা ধরা যাক। তিনি একটি স্যামন মাছ ধরার নৌকার জন্য নতুন রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থা স্থাপন করতে প্রায় ৪৫ হাজার মার্কিন ডলারের সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করেছিলেন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি সেই অর্থ পাননি। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছে না।
আলাস্কার কাইয়া ফিশারিজের লেসি ভেলস্কো জানান, তার কোম্পানি একটি নতুন রেফ্রিজারেশন সিস্টেম তৈরি করেছে, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং মাছের গুণগত মানও ভালো রাখে।
এর জন্য তারা সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অনুদান পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু এখন সেই অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
শুধু মৎস্যজীবীরাই নন, এই সিদ্ধান্তের কারণে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মেইনের টোগ ব্রাউন নামের একজন খাদ্য ব্যবসায়ী জানান, তিনি তার একটি প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ ডলারের সরকারি অনুদান পাওয়ার কথা ছিল, যার অর্ধেক তিনি পেয়েছেন।
কিন্তু বাকি অর্থ পাওয়া নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে, যখন কার্বন নিঃসরণ কমানো অত্যন্ত জরুরি, তখন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত পরিবেশ সুরক্ষার পথে একটি বড় বাধা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ‘মেরিন পলিসি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে মাছ ধরার কারণে প্রায় ২০ কোটি টনের বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়েছে।
এই বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে, কিছু অনুদানের বিষয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
(প্রতিবেদনের তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস)