ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রযুক্তি বাজারে বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য কমানোর লক্ষ্যে ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (ডিএমএ) নামের একটি নতুন আইন তৈরি করেছে। এই আইনের অধীনে, অ্যাপল-কে তাদের আইফোন ও আইপ্যাড-এর অপারেটিং সিস্টেম অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রযুক্তিগুলোর সাথে আরও ভালোভাবে কাজ করার উপযোগী করে তুলতে হবে।
সম্প্রতি, ইইউ এই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
ইইউ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অ্যাপল-কে তাদের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ-সুবিধা যুক্ত করতে হবে। এর ফলে অন্যান্য ডিভাইস ও অ্যাপ নির্মাতারা আইফোনের বিভিন্ন ফিচারের সুবিধা পাবে, যেমন – নোটিফিকেশন ব্যবস্থা উন্নত করা, ডিভাইসগুলোর মধ্যে সহজে সংযোগ স্থাপন করা এবং দ্রুত ডেটা আদান-প্রদান করা ইত্যাদি।
এছাড়াও, সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য আইফোনের বিভিন্ন ফিচারে প্রবেশাধিকার আরও সহজ ও স্বচ্ছ করার জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, তৃতীয় পক্ষের জন্য এখনো উন্মুক্ত নয় এমন প্রযুক্তিগত ডকুমেন্টেশনগুলিতে আরও ভালো প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
এই পদক্ষেপের ফলে অ্যাপল এবং ডেভেলপার উভয়ের জন্যই আইনি নিশ্চয়তা তৈরি হবে
তিনি আরও বলেন, “কার্যকর ইন্টারঅপারেবিলিটি” উদ্ভাবনী ডিভাইসগুলোর বাজারে গ্রাহকদের জন্য আরও ভালো সুযোগ তৈরি করবে।
তবে, অ্যাপল এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। তাদের মতে, এই নিয়ম তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে।
অ্যাপল এক বিবৃতিতে জানায়, “আজকের এই সিদ্ধান্তগুলো আমাদের জন্য লাল ফিতার ফাঁস তৈরি করবে, যা ইউরোপে ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপলের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে ধীর করে দেবে এবং আমাদের নতুন ফিচারগুলো বিনামূল্যে এমন কোম্পানিগুলোর কাছে দিতে বাধ্য করবে যারা একই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য নয়।” অ্যাপল আরও জানিয়েছে, তারা ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে এবং তাদের উদ্বেগের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করবে।
অন্যদিকে, গুগল-কেও ডিএমএ আইন মানতে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে ইইউ। যদিও গুগল কিছু পরিবর্তন এনেছে, যেমন – ফ্লাইট বিষয়ক তালিকা সরানো হয়েছে, তবুও তারা তাদের নিজস্ব পরিষেবাগুলিকে সার্চ রেজাল্টে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এছাড়াও, গুগল প্লে স্টোরের বাইরে অ্যাপ ডেভেলপারদের গ্রাহকদের জন্য সস্তা বিকল্প খুঁজে বের করার সুযোগ দিতেও তারা ব্যর্থ হচ্ছে।
গুগল জানিয়েছে, ইইউ-এর এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শনে আরও পরিবর্তন আনতে হবে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করা কঠিন করে তুলবে এবং ইউরোপীয় ব্যবসাগুলোর ট্র্যাফিকের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত “ভুল পথে চালিত”।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইইউ-এর এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তি বাজারে আরও বেশি প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করা।
এই আইনের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বাজারেও প্রযুক্তি পণ্যের দাম এবং সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।