যুদ্ধবিধ্বস্ত উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীদের অবদানকে তুলে ধরেছেন খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক হান্না স্টার্কি। ২০২৩ সালে বেলফাস্ট শহরে তোলা একটি ছবিতে এক তরুণীকে দেখা যায়, যার ঝলমলে লাল চুল যেন বিদ্রোহের প্রতীক। এই ছবিটির মাধ্যমে স্টার্কি উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি প্রক্রিয়ায় নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
বেলফাস্টে বেড়ে ওঠা স্টার্কি সেখানকার শ্রমিক শ্রেণির জীবন ও সম্প্রদায়ের উষ্ণতা অনুভব করেছেন। তিনি দেখেছেন কীভাবে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট উভয় সম্প্রদায়ের নারীরা ন্যায়বিচার, সমতা এবং শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। স্টার্কির মতে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরাই ছিলেন সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত এবং কার্যকর।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যানও তাই বলে, যেখানে শান্তি আলোচনায় নারীদের অংশগ্রহণে চুক্তি সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
স্টার্কি জানান, ছবি তোলার সময় তিনি একটি বিশেষ ধারণাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এমন একজন নারীকে খুঁজছিলেন যিনি সমাজের চোখে শক্তিশালী, স্বাধীন এবং কর্তৃপক্ষের তোয়াক্কা করেন না। অবশেষে, তিনি সেই নারীর দেখা পান, যিনি ছবিতে লাল চুল ও বিদ্রোহী রূপে সজ্জিত হয়ে বেলফাস্টের একটি ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
স্টার্কি এই ছবি তোলার জন্য একটি বিশেষ স্থান নির্বাচন করেন, যা একসময় প্রোটেস্ট্যান্ট অধ্যুষিত এলাকা ছিল। তিনি ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল সেট করার ক্ষেত্রেও সতর্ক ছিলেন, যাতে আকাশের অন্ধকার ও সমুদ্রের দৃশ্য ছবিতে ফুটিয়ে তোলা যায়।
স্টার্কি একজন ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার নন। তিনি সিনেমার মতো আবেগ সৃষ্টি করতে চান। তাঁর ছবিতে নারীদের গল্প বলার একটি বিশেষ ধরন রয়েছে, যা দর্শকদের ফটোগ্রাফির নির্মাণশৈলী সম্পর্কে ধারণা দেয়।
স্টার্কির ছবিগুলো গ্যালারিতে বড় আকারে প্রদর্শিত হয়, যেখানে দর্শকেরা ছবির প্রতিটি ডিটেইলস ভালোভাবে দেখতে পারেন এবং ছবিটির গভীরতা অনুভব করতে পারেন।
হান্না স্টার্কির জন্ম ১৯৭১ সালে, বেলফাস্টে। তিনি এডিনবার্গ নেপিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট লন্ডন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। নারী ও ফটোগ্রাফি তাঁর কাজের প্রধান অনুপ্রেরণা।
স্টার্কি মনে করেন, ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা থাকতে হয়। খ্যাতি বা অর্থের জন্য নয়, বরং এটি একটি সুন্দর সম্পর্ক, যেখানে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাই আসল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান