তুরস্কে এরদোগানের শাসনের পথে বাধা! প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কারাগারে!

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে বিরোধীপক্ষের ওপর দমননীতি ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি, ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ধরে রাখার একটি কৌশল।

দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও প্রায় ১০০ জনকে আটক করা হয়েছে।

বিরোধী দল এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর আগে এরদোগানের সরকার কর্তৃক নির্বাচিত মেয়রদের অপসারণ এবং তাদের স্থানে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগের তীব্র সমালোচনা করেছিল।

তুরস্কের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন ইস্তাম্বুলের ওজিয়েন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুরাত সোমার। তার মতে, তুরস্ক একটি “মুক্ত স্বৈরাচারী” শাসন ব্যবস্থা থেকে “রুশ বা বেলারুশীয় স্টাইলের, সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী” শাসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

মেয়র ইমামোগলু অবশ্য পিছপা হতে রাজি নন। আটকের আগে তিনি একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা বিশাল নির্যাতনের শিকার হচ্ছি, কিন্তু আমি ভয় পাবো না। আমি আপনাদের ভালোবাসি। আমি জনগণের উপর আস্থা রাখি।

আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।” তার স্ত্রী দিলেক ইমামোগলু এরদোগান ও তার দলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “যারা পরবর্তী নির্বাচনে হারতে চায় না, তারাই এই পদক্ষেপ নিয়েছে।”

ইমামোগলু তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। এমনকি কিছু জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমামোগলু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তিনি এরদোগানকে হারাতে পারেন।

এরদোগান এর আগে ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে, ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলেও তার দল ইস্তাম্বুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরটি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এরদোগান সম্ভবত সংবিধান সংশোধন অথবা আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে তার ক্ষমতা আরও দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

এই নিয়ম এড়াতে হলে, এরদোগানকে হয় সংবিধান সংশোধন করতে হবে, অথবা আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল, রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) সমর্থন প্রয়োজন হবে।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন, যা তাকে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করবে। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধী দল বিশেষ করে ইমামোগলুকে সঙ্গে নিয়ে কোনো নির্বাচন হলে এরদোগানের পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতিহাস সাক্ষী যে, এরদোগান নিজেও অতীতে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং সেই ঘটনা তার রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনেছিল। বিশ্লেষকদের মতে, ইমামোগলুর গ্রেফতার তার প্রতি সহানুভূতি বাড়াতে পারে এবং তাকে জাতীয়ভাবে পরিচিত রাজনৈতিক নায়কে পরিণত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *