শিরোনাম: স্মৃতিভ্রংশ বাড়ছে : কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া (Dementia) একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও অনেক বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে, রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধের উপায়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৬০ সাল নাগাদ শুধু আমেরিকাতেই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১ কোটিতে পৌঁছাতে পারে।
এর প্রধান কারণ হলো মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি। উন্নত জীবনযাত্রার কারণে মানুষ বেশি দিন বাঁচছে, ফলে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকিও বাড়ছে।
তবে আশার কথা হলো, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ডিমেনশিয়ার কারণ :
- বয়স বৃদ্ধি: ডিমেনশিয়ার প্রধান কারণ হলো বয়স। সাধারণত ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এর ঝুঁকি বাড়ে।
- জিনগত প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে, জিনগত কারণেও ডিমেনশিয়া হতে পারে। যদিও এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়নি, তবে যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে।
- জীবনযাত্রার ধরন : ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, মস্তিষ্কে আঘাত পেলে বা উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও ডিমেনশিয়া হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত ঘুম ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা উচিত।
- মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চেষ্টা করুন। সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা, নতুন কিছু শেখা এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ এগুলো ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ: ফল, সবজি, শস্য এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।
বাংলাদেশে ডিমেনশিয়ার চিত্র:
বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। উন্নত চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় রোগীরা সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পান না।
আমাদের দেশে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের প্রতি যত্ন নেওয়ার সংস্কৃতি বিদ্যমান, যা ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, সচেতনতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হন।
করণীয় :
ডিমেনশিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
পরিবারের সদস্যদের ডিমেনশিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, ডিমেনশিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সময় মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক