গাজার কান্না: যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়া, ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ!

গাজায় আবারও ধ্বংসযজ্ঞ, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর দিশেহারা ফিলিস্তিনিরা। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আবারও চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

গত কয়েকদিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। খবরগুলো বলছে, গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়কর দিকে যাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ জোরদার করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলায় এ পর্যন্ত চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এছাড়া, বুধবারের হামলায় মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।

গাজার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের হতাশা এবং উদ্বেগের কথা জানাচ্ছেন। আল-মাওয়াসি এলাকার ৪০ বছর বয়সী এক সাহায্য কর্মী, যিনি উদ্বাস্তু শিবিরে ত্রাণ বিতরণের কাজ করেন, তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি হওয়ায় আমরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমরা আবার সেই আগের অবস্থানে ফিরে গেছি।”

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে গাজার বাসিন্দাদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, হয় তারা হামাসকে সরিয়ে দিক, নতুবা তাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। এর পাশাপাশি, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার বিভিন্ন এলাকায় আবারও বোমা হামলা শুরু করেছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন করে উদ্বাস্তু হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

গাজার উত্তরাঞ্চলের একটি শহর, যেখানে এক সময় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল, সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠানো এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাটা তাদের জন্য বিপজ্জনক। তাই দ্রুত এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে তাদের।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে এক লাখ ষাট হাজারের বেশি মানুষ।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে সেখানকার প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা খাবার, পানি ও বিদ্যুতের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

সেখানকার হাসপাতালগুলোতে আহত ও অসুস্থদের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ঔষধের তীব্র সংকট।

গাজার পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সেখানকার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

বর্তমানে এক কেজি আলুর দাম বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০০ টাকার সমান। সাহায্য সংস্থাগুলো খাদ্য সরবরাহ কমাতে বাধ্য হচ্ছে।

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেখানকার একজন নার্স, যিনি পরিবারসহ উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, তিনি বলেন, “আমাদের জীবন এখন খুবই কঠিন। এখানে কোনো সাহায্য নেই, খাবার নেই, পানি নেই, বিশ্রাম নেই, এমনকি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলেও কিছু নেই।”

হামাস এবং ইসরায়েল উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। হামাস বলছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে, অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে হামাস আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *