ট্রাম্প-এর সঙ্গে জেলেনস্কির ‘ভালো’ আলোচনা! কী কথা হল?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্প্রতি একটি ‘ভালো’ এবং ‘স্পষ্ট’ আলোচনা হয়েছে। বুধবারের এই ফোনালাপে ইউক্রেন আংশিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে।

খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আলোচনা শেষে জেলেনস্কি এটিকে ‘ইতিবাচক, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং খোলামেলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের আগের দিনের আলোচনার ভিত্তিতে একটি আংশিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে তিনি সমর্থন দিয়েছেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প কিয়েভের জন্য আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে এর আগেকার সাক্ষাৎগুলোতে মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল। সেই সময়কার তিক্ততা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছিল।

তবে, জেলেনস্কি এখন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। বুধবারের ফোনালাপে তিনি ট্রাম্পকে একাধিকবার ধন্যবাদ জানান এবং যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা সমর্থন করার কথা জানান।

ফোনালাপের পর জেলেনস্কি টেলিগ্রামে লেখেন, ‘আমরা আমাদের টিমকে আংশিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং এর পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সমাধানের নির্দেশ দিয়েছি।’

অন্যদিকে, ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলেনস্কির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপকে ‘খুব ভালো’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আলোচনার বেশিরভাগই গতকাল প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে হওয়া আলোচনার ওপর ভিত্তি করে হয়েছে, যাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাগুলো সমন্বিত করা যায়।

আমরা সঠিক পথেই আছি।’

তবে, যুদ্ধবিরতির পরিধি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এখন আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তার বক্তব্য কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্পের একজন আলোচক স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যেকার ফোনালাপকে ‘মানবজাতির উন্নতির জন্য দুই মহান নেতার একত্র হওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের অভাব রয়েছে। ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন, আংশিক যুদ্ধবিরতি ‘জ্বালানি ও অবকাঠামো’র ওপর প্রযোজ্য হবে, যা দেখে মনে হচ্ছিল এটি বেসামরিক সব অবকাঠামোতেই কার্যকর হবে।

জেলেনস্কিও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর ‘জ্বালানি ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের’ কথা বলেছিলেন।

কিন্তু, রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার জানান, যুদ্ধবিরতি কেবল জ্বালানি খাতের ওপর প্রযোজ্য হবে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতেও শুধু জ্বালানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এমনকি, শান্তি আলোচনার জন্য বিদেশি সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার শর্ত দিয়েছে ক্রেমলিন।

ট্রাম্প অবশ্য ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে কোনো আলোচনার কথা অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, পেসকভ মস্কোয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পের দাবির বিরোধিতা করে বলেন, ‘পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যেকার আলোচনায় কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, সামরিক সহায়তা বন্ধের বিষয়টি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার প্রধান বিষয় হবে, তবে এটি প্রকাশ্যে আলোচনা করা হবে না।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এই দাবিকে অবাস্তব হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বর্তমানে, পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের মূল লক্ষ্যগুলো থেকে সরে এসেছেন এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। একটি প্রভাবশালী রুশ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিন মঙ্গলবার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, তিনি ২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া চারটি অঞ্চলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *