আতঙ্কের রাইডে কিশোরের মৃত্যু: টেকনিশিয়ানের বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড়!

ঢাকা, [তারিখ] – ফ্লোরিডার একটি বিনোদন পার্কে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন এক টেকনিশিয়ান। অভিযোগ উঠেছে, ওই রাইডের রক্ষণাবেক্ষণ ত্রুটি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

**ঘটনার সূত্রপাত**

২০২২ সালের মার্চ মাসে, ১৪ বছর বয়সী টাইরি স্যামসন নামের এক কিশোর ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে অবস্থিত আইকন পার্কের ‘অরল্যান্ডো ফ্রি ফল’ নামক একটি রাইড থেকে পরে মারা যায়।

জানা গেছে, ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা এবং ১৭২ কিলোগ্রাম ওজনের কারণে রাইডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তার জন্য সঠিকভাবে কাজ করেনি।

**টেকনিশিয়ানের অভিযোগ**

অস্টিন ক্যাম্পবেল-আলেকজান্ডার নামের ওই টেকনিশিয়ান সম্প্রতি একটি ‘হুইসেলব্লোয়ার’ মামলা করেছেন।

মামলার অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে তিনি রাইডের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তার দাবি, রাইডটির সেন্সরগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যা নিরাপত্তা সীমার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

এছাড়াও, অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কারণে রাইডের সিলিন্ডারগুলো সিটগুলোকে সঠিকভাবে আটকাতে পারছিল না এবং রাইডের মেটাল কাঠামোতে ফাটল দেখা দিয়েছিল।

ক্যাম্পবেল-আলেকজান্ডার আরও জানান, তাকে এবং তার সহকর্মীদের রাইড রক্ষণাবেক্ষণ বা যাত্রী নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তার আইনজীবী গ্রেগ শ্মিitz এক সাক্ষাৎকারে জানান, “তিনি তার ম্যানেজার এবং রাইডের মালিকের কাছে উদ্বেগের বিষয়গুলো জানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”

**দুর্ঘটনার বিবরণ**

যেদিন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেদিন টাইরি স্যামসন বন্ধুদের সঙ্গে স্প্রিং ব্রেকের ছুটিতে অরল্যান্ডো ভ্রমণে গিয়েছিল।

‘অরল্যান্ডো ফ্রি ফল’ রাইডটিতে ৩০ জন যাত্রী বসতে পারতেন, যা একটি টাওয়ারের সাথে যুক্ত ছিল। যাত্রীদের সিটে বসানোর পর তাদের কাঁধের সাথে লাগানো নিরাপত্তা বন্ধনী দিয়ে সুরক্ষিত করা হতো।

এরপর টাওয়ারটি উপরে উঠত এবং প্রায় ১৩১ মিটার উচ্চতা থেকে নিচে নামানো হতো। টাইরির শরীরের আকারের কারণে তার নিরাপত্তা বন্ধনী সঠিকভাবে লক হয়নি এবং ব্রেকিংয়ের সময় সে সিট থেকে ছিটকে পরে যায়।

এই ঘটনার পর ক্যাম্পবেল-আলেকজান্ডার মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগে ভুগছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন।

**ফৌজদারি ব্যবস্থা এবং ক্ষতিপূরণ**

মামলায় টেকনিশিয়ান উল্লেখ করেছেন, দুর্ঘটনার পরে তাকে রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক মিথ্যা তথ্য তৈরি করতে বলা হয়েছিল।

তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে এক বছরের জন্য বেতনসহ ছুটিতে পাঠানো হয় এবং পরে চাকরিচ্যুত করা হয়। স্যামসনের পরিবার রাইডের অপারেটরদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল এবং এর নির্মাতা অস্ট্রিয়ান কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা প্রায় ৩১০ মিলিয়ন ডলারের (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতিপূরণ জিতেছিলেন।

ক্যাম্পবেল-আলেকজান্ডার তার মামলায় ৫০,০০০ ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। তার আইনজীবীর মতে, এর মধ্যে বকেয়া বেতন, ক্ষতিপূরণ এবং শাস্তিমূলক জরিমানা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘হুইসেলব্লোয়ার মামলা’ হল এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ব্যক্তি কোনো সংস্থায় ঘটে যাওয়া অনিয়ম বা দুর্নীতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালে, তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *