আইডাহোর নিহত শিক্ষার্থীদের রুমমেটদের কথোপকথন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

**যুক্তরাষ্ট্রের আইডিহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন তথ্য, সন্দেহ বাড়ছে দুই রুমমেটের গতিবিধির উপর**

যুক্তরাষ্ট্রের আইডিহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্গারের বিরুদ্ধে নতুন কিছু তথ্য প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। এই মামলায় নিহত শিক্ষার্থীদের রুমমেটদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

২০২২ সালের নভেম্বরে, আইডিহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী – ম্যাডিসন মোগেন, কাইলি গনকালভেস, জেনা কার্নোডল এবং ইথান চাপিন- তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি বাড়িতে খুন হন। এই ঘটনায় ব্রায়ান কোহবার্গারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি। আগামী আগস্ট মাস থেকে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত আদালতের নথিতে, কোহবার্গারের আইনজীবীরা নিহতদের রুমমেট, ডিলান মর্টেনসেন এবং বেথানি ফাঙ্কের ফোন কল ও টেক্সট বার্তার সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আইনজীবীদের দাবি, প্রসিকিউটররা ঘটনার দিন ভোর রাতের কিছু নির্দিষ্ট সময়ের তথ্য-প্রমাণ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করছেন, যা পুরো ঘটনার চিত্র তুলে ধরছে না।

আদালতের নথিতে দেখা যায়, ঘটনার দিন ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে মর্টেনসেন ও ফাঙ্কের মধ্যে আতঙ্কের টেক্সট বার্তা বিনিময় হয়। মর্টেনসেন ৪টা ২২ মিনিটে ফাঙ্ককে জানান, “কেউ ফোন ধরছে না”। এরপর মর্টেনসেন জানান, তিনি তাদের ঘরে মুখোশ পরা এক ব্যক্তিকে দেখেছেন এবং “আমি ভয় পাচ্ছি”। ফাঙ্ক তখন তাকে তার রুমে যেতে বলেন এবং ঘর থেকে পালিয়ে যেতে বলেন।

তবে, নতুন নথিতে কোহবার্গারের আইনজীবীরা বলছেন, ঘটনার পরে ফাঙ্ক দ্রুত স্ন্যাপচ্যাট ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন এবং কয়েক ঘণ্টা পর তার বাবা-মাকে ফোন করেন। আইনজীবীরা আরও দাবি করেন, মর্টেনসেন প্রসিকিউটরদের দাবি করা সময়ের চেয়ে আগে ঘুম থেকে উঠেছিলেন এবং তিনিও ফাঙ্কের সাথে তার রুমে গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা তাদের ফোনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলেন।

আদালতের নথিতে মর্টেনসেন ও ফাঙ্কের ফোন ব্যবহারের বিস্তারিত সময় উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার দিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ফাঙ্ক তার বাবাকে ফোন করেন। এরপর সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে তিনি আরও কয়েকটি নম্বরে ফোন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। মর্টেনসেন সকাল ৮টা ৫ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন।

আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন, মর্টেনসেন সকাল ১০টা ২৩ মিনিটের আগে কেন অন্য রুমমেটদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। প্রসিকিউটরদের ভাষ্য অনুযায়ী, মর্টেনসেন ঘুম থেকে উঠে যখন তার রুমমেটদের কোনো সাড়া পাননি, তখনই তিনি তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে, কোহবার্গারের আইনজীবীরা বলছেন, মর্টেনসেন ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছিলেন।

আদালতের নথিতে আরও দেখা যায়, মর্টেনসেন ১০টা ২৩ মিনিটে ম্যাডিসন মোগেনকে এবং ১০টা ২৯ মিনিটে কাইলি গনকালভেসকে টেক্সট করেন। এরপর তিনি ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। ১১টা ৫৬ মিনিটে ফাঙ্ক জরুরি নম্বরে ফোন করে ঘটনার কথা জানান।

আদালতে পেশ করা তথ্যে দেখা যায়, জরুরি নম্বরে ফোন করার সময় মর্টেনসেন ও ফাঙ্ক উভয়েই ছিলেন। এছাড়া তাদের সাথে আরও একজন বন্ধুও ছিলেন, যিনি ঘটনার বিবরণ দেন।

প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, তারা এই মামলার শুনানিতে দুই রুমমেটকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করতে চান এবং তাদের টেক্সট বার্তার মাধ্যমে ঘটনার সময়কাল প্রমাণ করতে চান। তবে, কোহবার্গারের আইনজীবী এই মামলায় মর্টেনসেন ও ফাঙ্কের জবানবন্দিতে অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন।

কোহবার্গারের আইনজীবীরা বলছেন, ঘটনার পরে রুমমেটরা কেন দ্রুত জরুরি বিভাগে ফোন করেননি, সেই বিষয়টিও সন্দেহের জন্ম দেয়। তারা বলছেন, মর্টেনসেন তার ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন, অথচ তিনি ফাঙ্কের সাথে দেখা করার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।

এই মামলার শুনানিতে প্রসিকিউটররা প্রমাণ করতে চান যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে, কোহবার্গারের আইনজীবীরা বলছেন, তাদের কাছে এমন কিছু প্রমাণ আছে যা অন্য সন্দেহভাজনদের দিকে ইঙ্গিত করে। তারা কোহবার্গারের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তার একটি বিশেষ শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *