উত্তর মেরুর আলো: স্বপ্নের সফর, যা ভুলতে পারবেন না!

আর্টিক অঞ্চলের আকাশে রাতের বেলা এক অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়, যা উত্তর মেরু অঞ্চলের আলো বা “অরোরা বোরিয়ালিস” নামে পরিচিত। এই আলোকরশ্মি দেখতে পাওয়া অত্যন্ত দুর্লভ এবং যারা এই দৃশ্য দেখে তাদের অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

সম্প্রতি, নরওয়ের উত্তরে এমন একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন একজন অভিযাত্রী, যা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

অভিযাত্রীর যাত্রা শুরু হয় সুইডিশ আউটডোর সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক “ক্ল্যাটরমুসেন”-এর একটি নতুন উদ্যোগে, যেখানে টেকসই ভ্রমণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল স্কিইং এবং কুকুর টানা স্লেজ গাড়িতে চড়ে বরফের রাজ্যে ঘোরাঘুরি করা, আর ভাগ্য ভালো থাকলে উত্তর মেরুর আলো দেখার সুযোগ।

যাত্রাটি সহজ ছিল না। র‍্যালি-ডুরহাম থেকে বোস্টন, তারপর রেইকজাভিক, অসলো হয়ে অবশেষে আলতাতে পৌঁছতে চারটি ফ্লাইট পরিবর্তন করতে হয়েছে। আলতা থেকে, “নর্দার্ন লাইটসের শহর” হিসেবে পরিচিত ফিনমার্ক অঞ্চলের একটি ছোট গ্রাম ল্যাংফজর্ডবটনে যেতে আরো ৯০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে হয়।

সেখানে, আর্কটিক সার্কেলের চার ডিগ্রি উপরে, অভিযাত্রী ও আরো সাতজন পর্যটকের একটি দল দুটি ছোট লজে এক সপ্তাহ কাটানোর জন্য অপেক্ষা করছিল। নভেম্বরের শেষ দিক থেকে সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই সূর্যের আলো দেখার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে।

প্রথম কয়েক দিন তারা স্কিইংয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। স্কিইংয়ের জন্য বিশেষ ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, যেমন—ত্বকের মতো দেখতে “স্কিনস” যা স্কির নিচে লাগানো হয়, যা বরফের ওপর সহজে চলতে সাহায্য করে।

অভিযাত্রীকে “স্প্লিটবোর্ড” সরবরাহ করা হয়েছিল, যা একদিকে স্কি এবং অন্যদিকে স্নোবোর্ডের মতো কাজ করে। অভিজ্ঞ গাইড টোরে এবং ভেগার্ড কার্লস্ট্রমের তত্ত্বাবধানে তারা ৬০০ মিটার উঁচু একটি পাহাড়ে আরোহণ করেন।

পাহাড়ের চূড়া থেকে তারা অসংখ্য ফিয়র্ড, পাহাড়ের চূড়া, একটি বিশাল হিমবাহ এবং ভাইকিং সমাধিস্থল দেখতে পান।

পরের দিন, তারা আরও উঁচু একটি পাহাড়ে ওঠেন, যেখানে আরোহণ ছিল আরও কঠিন। তবে, সেখানকার দৃশ্য আগের দিনের চেয়েও সুন্দর ছিল। পাহাড়ের চূড়া থেকে তারা আরও অনেক পাহাড়, উপত্যকা এবং ফিয়র্ড দেখতে পান।

বিকেল ৩টার দিকে, যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, তখন মেঘগুলো ভেঙে যায় এবং সাদা ভূমি ও ধূসর সমুদ্রের উপর এক মনোরম দৃশ্য তৈরি হয়।

অবশেষে, উত্তর মেরুর আলোর দেখা মেলে। রাতের আকাশে তারা অসংখ্য তারা দেখতে পান এবং তাদের মনে হচ্ছিল যেন তারা এক উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখতে চলেছে। কিছুক্ষণ পরেই, উজ্জ্বল সবুজ এবং বেগুনী রঙের আলো তাদের মাথার উপর দিয়ে বয়ে যায়।

আলোর এই আলো এতটাই দ্রুত পরিবর্তন হয় যে, এটিকে ক্যামেরাবন্দী করা কঠিন। আলোর এই খেলা প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল।

এরপর অভিযাত্রীরা “পার্কেন গার্ড হাস্কি” নামক একটি জায়গায় যান, যেখানে তারা কুকুর টানা স্লেজ গাড়িতে চড়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এখানে, ম্যারিয়ান স্কিওথাগ এবং আর্নে কার্লস্ট্রম নামের দুজন অভিজ্ঞ রেসারের তত্ত্বাবধানে তারা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

তারা শিখেছিলেন কীভাবে স্লেজ গাড়ি চালাতে হয় এবং কুকুরের দল কীভাবে কাজ করে।

ভ্রমণের শেষ রাতে, সবাই যখন একটি ডাইনিং রুমে রাতের খাবার খাচ্ছিল, তখন তাদের ফোনে একটি সতর্কবার্তা আসে। গাইড জানান, উত্তর মেরুর আলো আবার দেখা যাচ্ছে। এরপর তারা লজের বাইরে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন, আবারও সেই মনোমুগ্ধকর আলো তাদের সামনে।

এই আলোকরশ্মিগুলো যেন রাতের আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছিল। অভিযাত্রীরা ছবি তোলেন এবং এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করেন।

পরের দিন, আলতাতে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়, মনে হচ্ছিল যেন আকাশ তাদের বিদায় জানাচ্ছে। এই অভিজ্ঞতা সম্ভবত তাদের “শীঘ্রই দেখা হবে” বলার মতো ছিল।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *