সামরিক ক্ষমতা বাড়ছে? ইন্দোনেশিয়ায় বিতর্কিত আইন!

ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনী এবার বেসামরিক প্রশাসনে আরও বেশি ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার এমন একটি বিতর্কিত আইন পাস করেছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

নতুন এই আইনের ফলে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, রাষ্ট্রীয় সচিবালয়, সন্ত্রাস দমন সংস্থা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক পদগুলোতেও অধিষ্ঠিত হতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এই আইনে কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমাও বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব আরও বাড়িয়ে দেবে, যা দেশটির গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের কারণ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই আইন সাবেক স্বৈরশাসক সুহার্তোর ‘নতুন শাসন ব্যবস্থা’র (New Order) পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। সুহার্তো ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে একনায়ক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন।

ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রাবো Subianto, যিনি একসময় দেশটির বিশেষ বাহিনীর জেনারেল ছিলেন এবং সুহার্তোর জামাতা ছিলেন, তিনিও এই আইনের পক্ষে। সরকার পক্ষের দাবি, দেশের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্যই এই আইন আনা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী সুপ্রাতমান আন্ডি আগতাস জানিয়েছেন, এই আইন সুহার্তোর শাসনের মতো সামরিক আধিপত্যের প্রত্যাবর্তন নয়, বরং এটি দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্জাফরি সিয়ামসুদ্দিনের মতে, “ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সামরিক প্রযুক্তির আধুনিকায়নের কারণে সামরিক বাহিনীকে সনাতন ও অ-সনাতন উভয় ধরনের সংঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

তবে, মানবাধিকার কর্মী এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাঁদের মতে, আইনটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আইনটি পাস করার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে ছাত্ররা বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে।

তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে সামরিকীকরণ বাড়বে এবং জনগণের অধিকার খর্ব হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেনেডি মুসলিম মনে করেন, যদিও জনগণের মধ্যে সামরিক বাহিনীর প্রতি আস্থা রয়েছে, তবে এই আইনের কারণে সেই আস্থায় চিড় ধরতে পারে।

ইন্দোনেশিয়ার এই বিতর্কিত সামরিক আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি দেশের সুরক্ষার জন্য জরুরি, আবার অনেকের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়বে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *