মহাবিশ্বের শেষ: ভয়ঙ্কর ‘বিগ ক্রাঞ্চ’-এর দিকে?

মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ: ডার্ক এনার্জি কি তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে?

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই মহাবিশ্বের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছেন। এই প্রসারণের পেছনে রয়েছে এক রহস্যময় শক্তি, যা ‘ডার্ক এনার্জি’ নামে পরিচিত।

এটি যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগী, যা মহাবিশ্বের সবকিছুকে প্রভাবিত করতে পারে। সম্প্রতি, ডার্ক এনার্জি নিয়ে নতুন কিছু তথ্য সামনে এসেছে, যা আমাদের মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা আরও জটিল করে তুলেছে।

মহাবিশ্বের শুরুতে ছিল এক অতি ক্ষুদ্র বিন্দু, যা ‘বিগ ব্যাং’ নামে পরিচিত এক বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রসারিত হতে শুরু করে। এই প্রসারণের বিরুদ্ধে কাজ করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, যা গ্যালাক্সি ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে পরস্পরের দিকে আকর্ষণ করে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, মহাবিশ্বের প্রসারণ একটি নির্দিষ্ট হারে হচ্ছে না, বরং এটি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এই বর্ধিত প্রসারণের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা ডার্ক এনার্জিকে চিহ্নিত করেছেন। ডার্ক এনার্জি অনেকটা “অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি”র মতো কাজ করে, যা মহাবিশ্বের প্রসারণকে আরও ত্বরান্বিত করে।

ডার্ক এনার্জি এবং এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ‘ডার্ক এনার্জি স্পেকট্রোস্কোপিক ইনস্ট্রুমেন্ট’ (DESI)।

এই যন্ত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিশাল সংখ্যক গ্যালাক্সির আলো বিশ্লেষণ করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। সম্প্রতি, DESI-এর বিজ্ঞানীরা ১১ বিলিয়ন বছর আগের মহাবিশ্বের ১৫ মিলিয়ন গ্যালাক্সির উপর গবেষণা করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন।

তাঁদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ডার্ক এনার্জির পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। সম্ভবত, একসময় এর প্রভাব সর্বোচ্চ ছিল, কিন্তু এখন তা ধীরে ধীরে কমছে।

যদি DESI-এর এই পর্যবেক্ষণ সত্য হয়, তাহলে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন হতে পারে। প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী, ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।

এই ডার্ক এনার্জি যদি ভবিষ্যতে কমতে থাকে, তাহলে মহাবিশ্বের পরিণতি কী হবে, সেই প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসে।

এই বিষয়ে দুটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎবাণী করা হচ্ছে। প্রথমটি হলো, যদি ডার্ক এনার্জি কমে শূন্যের নিচে চলে যায় এবং ঋণাত্মক শক্তিতে পরিণত হয়, তবে মহাবিশ্বের প্রসারণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি, এটি সংকুচিত হতে শুরু করতে পারে।

এই অবস্থায়, গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের দিকে আসতে থাকবে এবং অবশেষে সবকিছু একটি বিন্দুতে মিলিত হবে। একে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ বা মহাবিশ্বের সংকোচন বলা হয়।

দ্বিতীয় সম্ভবনা হলো, ডার্ক এনার্জি যদি শূন্যের কাছাকাছি স্থিতিশীল হয়ে যায়, তাহলে প্রসারণ চলতেই থাকবে। সেক্ষেত্রে, গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে।

একসময়, তারা এত দূরে চলে যাবে যে তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ থাকবে না। অবশেষে, নক্ষত্রের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে মহাবিশ্বের সবকিছু অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাবে। একে ‘বিগ ফ্রিজ’ বা মহাবিশ্বের শীতলীকরণ বলা হয়।

ডার্ক এনার্জির ভবিষ্যৎ গতিবিধির উপরই নির্ভর করছে মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, ভবিষ্যতে কী ঘটবে।

তবে, DESI-এর নতুন তথ্য এই বিষয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং আমাদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *