হাঁটাচলার পথে ব্যাগের ওজন কমানোর ১০টি কার্যকরী উপায়। বাংলাদেশে পাহাড়-পর্বত আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে ট্রেকিং বা হাঁটাচলার প্রবণতা বাড়ছে দিন দিন।
যারা পাহাড় ভালোবাসেন, ট্রেকিং তাদের কাছে এক দারুণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু ট্রেকিং-এর সময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেক সময় এই আনন্দ মাটি হয়ে যায়।
তাই ট্রেকিং-এর সময় ব্যাগের ওজন কমানোটা খুব জরুরি। এতে পথ চলা সহজ হয়, শরীরে ক্লান্তি আসে কম, এবং ট্রেকিংয়ের আসল মজা উপভোগ করা যায়।
আজকের লেখায় আমরা এমন কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব যা অনুসরণ করে আপনারা আপনাদের ব্যাগের ওজন কমাতে পারবেন।
ওজন কমানোর গুরুত্ব। ট্রেকিং-এ ব্যাগের ওজন কমানোর প্রধান কারণ হলো শারীরিক আরাম।
ভারী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন এবং ক্লান্তিকর। হালকা ওজনের ব্যাগ থাকলে শরীর সহজে মুভ করতে পারে, হাঁটাচলার গতি বাড়ে, এবং ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
এছাড়া, হালকা ব্যাগ আপনাকে প্রকৃতির আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়, যা ট্রেকিং-এর মূল আকর্ষণ।
কি কি জিনিস হালকা করা যায়।
১. রান্নার সরঞ্জাম:
যারা ট্রেকিংয়ে যান, তারা প্রায়ই ক্যাম্পিং-এর সময় রান্নার পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে ভারী রান্নার সরঞ্জাম, যেমন – বড় হাঁড়ি-পাতিল, প্লেট, বাটি, এগুলো ব্যাগের ওজন বাড়ায়।
এর বদলে হালকা ওজনের টাইটানিয়ামের একটি পাত্র ব্যবহার করতে পারেন, যা রান্নার পাশাপাশি খাবার খাওয়ার কাজেও লাগবে। বাজারে এখন অনেক ধরনের হালকা ওজনের রান্নার সরঞ্জাম পাওয়া যায়, যা আপনার ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতা আরও সহজ করে তুলবে।
২. জল:
ট্রেকিং-এ জলের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে বেশি জল বহন করাটাও বেশ কষ্টকর।
তাই, যেখানে জলের উৎস আছে, যেমন ঝর্ণা বা নদী, সেখান থেকে জল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া, হালকা ওজনের জল ফিল্টার ব্যবহার করে জলকে আরও নিরাপদ করে তোলা যায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার ফিল্টার পাওয়া যায়, যা সহজেই আপনার ব্যাগে বহন করা যায়।
৩. তাঁবুর খুঁটি:
সাধারণত তাঁবুর খুঁটিগুলো বেশ ভারী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি মাল্টি-টুল ব্যবহার করতে পারেন, যা একইসাথে তাঁবুর খুঁটি এবং অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।
হালকা ওজনের অ্যালুমিনিয়ামের খুঁটিও ব্যবহার করতে পারেন।
৪. রান্নার চুলা:
ক্যাম্পিং-এর জন্য ভারী গ্যাস স্টোভ ব্যবহারের পরিবর্তে ছোট এবং হালকা ওজনের গ্যাস স্টোভ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে এই ধরনের অনেক স্টোভ পাওয়া যায়, যা সহজেই ব্যাগে বহন করা যায় এবং রান্নার কাজও সহজে সম্পন্ন করা যায়।
৫. প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম:
ট্রেকিং-এ আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ রাখা জরুরি। তবে বিশাল আকারের ঔষধের বাক্স বহন করার প্রয়োজন নেই।
ছোট একটি হালকা ওজনের কিট তৈরি করুন, যেখানে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক, ব্যথানাশক ওষুধ ইত্যাদি থাকে।
৬. ব্যাকপ্যাক:
ব্যাকপ্যাক ট্রেকিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হালকা ওজনের ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করলে ব্যাগের ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হালকা ওজনের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যায়, যা আপনার ট্রেকিং-এর জন্য উপযুক্ত।
৭. ট্রেকিং পোল:
ট্রেকিং পোল ব্যবহার করলে হাঁটার সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পায়ের উপর চাপ কম পরে।
কার্বন ফাইবারের তৈরি ট্রেকিং পোল হালকা ওজনের হওয়ায় বহন করতে সুবিধা হয়।
৮. পোশাক:
হালকা ও দ্রুত শুকনো হয় এমন পোশাক ট্রেকিং-এর জন্য সেরা।
সিনথেটিক কাপড়, যা সহজে ঘাম শোষণ করে, ট্রেকিং-এর জন্য ভালো। অতিরিক্ত পোশাক নেওয়া এড়িয়ে চলুন।
৯. স্লিপিং প্যাড:
ঘুমের জন্য আরামদায়ক স্লিপিং প্যাড ট্রেকিং-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বাজারে এখন হালকা ওজনের স্লিপিং প্যাড পাওয়া যায়, যা সহজেই বহন করা যায়।
ফোম বা সেলফ-ইনফ্লাটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
১০. তাঁবু:
হালকা ওজনের তাঁবু ব্যবহার করা ট্রেকিং-এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেকিং পোল ব্যবহার করে এমন তাঁবু ব্যবহার করতে পারেন, যা ওজনে হালকা হয় এবং সহজে বহন করা যায়।
কোথায় পাবেন হালকা ওজনের সরঞ্জাম।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন এবং অফলাইনে হালকা ওজনের ট্রেকিং সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
বিভিন্ন আউটডোর সরঞ্জাম বিক্রয়কারী দোকানে, স্পোর্টস শপে অথবা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে (যেমন – দারাজ, অথবা নিজের পছন্দের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম) আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে নিতে পারেন।
কেনার আগে পণ্যের ওজন এবং গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
উপসংহার।
ট্রেকিং-এ ব্যাগের ওজন কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হালকা ওজনের সরঞ্জাম ব্যবহার করে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সীমিত রেখে এবং সঠিক পরিকল্পনা করে আপনি আপনার ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে পারেন।
বাংলাদেশের সুন্দর পাহাড় এবং প্রকৃতির মাঝে ট্রেকিংয়ের সুযোগকে কাজে লাগান এবং ট্রেকিং-এর আসল মজা উপভোগ করুন।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার