মাছের জীবন: সংকটাপন্ন প্রজাতি বাঁচাতে এগিয়ে এলেন সংগ্রাহকরা!

বিলুপ্তির পথে থাকা বিরল মাছকে বাঁচাতে একদল মানুষের সংগ্রাম।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে আফ্রিকা ও মেক্সিকোর কিছু অঞ্চলে, স্বাদুপানির মাছের বেশ কিছু প্রজাতি আজ চরম ঝুঁকির সম্মুখীন। দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, একদল প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ এগিয়ে এসেছেন, যারা নিজেদের সংগ্রহশালায় এই বিরল প্রজাতির মাছদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়ার কথাই ধরা যাক। কেনিয়া, উগান্ডা এবং তানজানিয়ার এই বিশাল হ্রদে এক সময়ের প্রচুর মাছ ছিল, যাদের মধ্যে অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে।

তবে কিছু মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখনো আশা টিকে আছে। তারা শুধু মাছ সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের প্রজনন এবং পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এদের মধ্যে পিটার জর্জ নামের একজন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের পিটারশামে বসবাসকারী ৭৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি নিজের বেসমেন্টে ১০০০ এর বেশি মাছ সংরক্ষণ করেন।

তিনি বলেন, “মাছ আমার জীবনের অন্যতম ভালোবাসা।” জর্জের সংগ্রহে থাকা মাছগুলো মূলত পূর্ব আফ্রিকার রিফ্ট লেকের সিচলিড প্রজাতির, যাদের উজ্জ্বল বর্ণ তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

মাছ সংগ্রহকারীদের এই কাজটি বেশ কঠিন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, একবার যদি কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

তাদের মতে, মাছগুলোকে পুনরায় তাদের পুরনো পরিবেশে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। পরিবেশ দূষণ, অন্য প্রজাতির মাছের আক্রমণ এবং আবাসস্থলের পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় এই চেষ্টা সফল হয় না।

তা সত্ত্বেও, এই মানুষগুলো হাল ছাড়তে রাজি নন। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, তারা একদিন এই মাছগুলোকে আবার তাদের পুরনো পরিবেশে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।

তবে, সব ক্ষেত্রে যে এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে, তা নয়। অনেক সময় দেখা গেছে, একবার কোনো মাছকে প্রকৃতিতে ছাড়া হলে, কিছু অসাধু ব্যক্তি পুনরায় তাদের ধরে বাজারে বিক্রি করে দেয়।

এই কারণে, কিছু ক্ষেত্রে পুনরায় মাছ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তা সত্ত্বেও, “বেবস ইন দ্য সিচলিড হবি” নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পাম চিন সিচলিড মাছ সংরক্ষণের জন্য ২ লক্ষ ডলারেরও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

তার মতে, “প্রজাতির অস্তিত্ব না থাকার চেয়ে, অন্তত তাদের একটি সংগ্রহশালায় বাঁচিয়ে রাখা ভালো।”

মেক্সিকোতে পাওয়া যাওয়া গোয়েডিড নামক একটি বিপন্ন প্রজাতির মাছকে পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মাইকেল ককের প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি একসময় ভিয়েনার একটি অ্যাকোয়ারিয়ামের কিউরেটর ছিলেন।

বর্তমানে মেক্সিকোতে বসবাস করে তিনি গোয়েডিড মাছ রক্ষার জন্য কাজ করছেন। তিনি জানান, ছোটবেলায় অস্ট্রিয়ার জঙ্গলে ঘুরে প্রকৃতির যে অপরূপ রূপ তিনি দেখেছিলেন, সেই স্মৃতি এখনো তার মনে গেঁথে আছে।

তিনি চান, সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন কোনোভাবে টিকে থাকে।

ককের নেতৃত্বে, চেস্টার চিড়িয়াখানা এবং মেক্সিকোর মিশোআকানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় টেকুইলা স্প্লিটফিন নামক একটি মাছের প্রজাতিকে পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

এই কাজটি ছিল মেক্সিকোতে বিলুপ্তপ্রায় কোনো মাছকে পুনরায় বাঁচানোর প্রথম সফল প্রচেষ্টা। কক মনে করেন, তাদের এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্যান্য প্রজাতির মাছকেও বাঁচানো যেতে পারে।

এই কাজে মাছ সংগ্রহকারীদের একা কাজ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা। চেস্টার চিড়িয়াখানার অ্যাকোয়ারিস্ট বেকি গুডউইন বলেন, “ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে মাছের উপযুক্ত প্রজনন ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

তাই বৃহত্তর সহযোগিতা খুবই জরুরি।”

মাছ সংগ্রহকারীদের এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাদের মাছের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তারা চান, তাদের প্রিয় মাছগুলো যেন কোনোভাবে বিলুপ্ত না হয়ে যায়।

তাদের এই ভালোবাসা এবং প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *