কলম্বিয়া: আমার টাকা ফেরত চাই!

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের উপর কর্তৃপক্ষের দমননীতি, গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে টিউশন ফি ফেরত চেয়েছেন এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী। আল জাজিরায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ওই নিবন্ধে লেখক, যিনি নিজেও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক, জানিয়েছেন, গত ৫ই মার্চ বার্নার্ড কলেজ কতৃপক্ষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসা ডজনখানেক পুলিশ সদস্য ফিলিস্তিনপন্থি তিন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়। এসময় অনেক শিক্ষার্থীকে মারধর ও গ্রেপ্তার করা হয়।

লেখকের মতে, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি বিষয়ক কার্যক্রম বন্ধ করার ধারাবাহিক চেষ্টার অংশ, যা তারা ‘জাতিবিদ্বেষ বিরোধী’ কার্যক্রমের মোড়কে চালিয়ে যাচ্ছে।

এর কয়েকদিন পরেই, ৮ই মার্চ, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় মাহমুদ এর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

কর্তৃপক্ষের এই ধরণের স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক মার্কিন সহপাঠী ও শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এটি বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি চরম আঘাত, যা কিনা তাদের আমেরিকান নাগরিক হিসেবে পরিচিতির ভিত্তি।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। লেখক উল্লেখ করেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ‘লেইহি আইন’ (Leahy Law) এড়িয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় অনেক ফিলিস্তিনি এরই মধ্যে চাকরি, শিক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

তাদের কাছে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন সকল শিক্ষার্থীর জন্য বৈষম্যবিরোধী প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে, তখন ‘কাউকে জায়নবাদী বলাটাও বৈষম্যমূলক’ এমনটা উল্লেখ করা হয়।

এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী ইসরাইলের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করলে, তার বিরুদ্ধেও বৈষম্যের অভিযোগ আনা হয়। লেখক মনে করেন, যারা ফিলিস্তিন ও জায়নবাদের সমালোচনা করেন, তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের এমন নীরবতা বর্তমান সংকট তৈরি করেছে।

১১ই মার্চ, পরীক্ষার শেষ দিনে, DHS এজেন্টরা কয়েকজন শিক্ষার্থীর খোঁজে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক ভবনে তল্লাশি চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ক্যাটরিনা আর্মস্ট্রং, এসব ঘটনায় ‘হৃদয় ভেঙে গেছে’ বলে মন্তব্য করলেও, লেখক মনে করেন, কর্তৃপক্ষের এই দ্বিমুখী আচরণ হতাশাজনক।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট একদিকে ফিলিস্তিনপন্থী কার্যক্রমকে অপরাধীকরণ করছেন, আবার অন্যদিকে জায়নবাদী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ছাত্র বিতাড়নের মতো কার্যক্রমের জন্য উৎসাহিত করছেন।

লেখক আরও জানান, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে মুখোশ নিষিদ্ধ করা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগ ছোট করা, আন্তর্জাতিক হলোকস্ট স্মরণ জোটের (International Holocaust Remembrance Alliance) সংজ্ঞা অনুযায়ী বর্ণবাদ বিরোধী নীতিমালা তৈরি করা এবং ভর্তি প্রক্রিয়া সংস্কার করা।

ইসরাইলের গাজায় নির্বিচারে হামলা এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখক বলেন, মূল আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত ফিলিস্তিন, কলম্বিয়া নয়।

তবে, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, যিনি স্নাতক শেষ করার অপেক্ষায় রয়েছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতি তার কাছে প্রতিদিনের বাস্তবতা। সবশেষে, কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের প্রতিবাদস্বরূপ লেখক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ৮১,৫০০ মার্কিন ডলার টিউশন ফি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

কারণ, তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি ‘সেরা মানের শিক্ষা’ প্রদানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *