গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি) ‘রক্তের খনিজ’ ব্যবসা বন্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই খনিজগুলি মূলত ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয় এবং প্রায়শই সশস্ত্র সংঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শোষণের সঙ্গে জড়িত।
ডিআরসি সরকার এই অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করছে।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, যা খনিজ সম্পদে ভরপুর, আফ্রিকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বিশাল দেশ। এখানে কলতান, টিন, টাংস্টেন, এবং ট্যানটালামের (সংক্ষেপে ৩টিজি) মতো মূল্যবান খনিজ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
কিন্তু এই খনিজ সম্পদের লোভ প্রায়ই রক্তাক্ত সংঘাতের জন্ম দেয়। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো খনিজ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, যার ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর নেমে আসে চরম নির্যাতন।
শিশুদের শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়, চলে জোরপূর্বক শ্রম শোষণ, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
ডিআরসি সরকার এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর। তারা খনিজ ব্যবসার ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে, খনিজ উত্তোলনের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করার চেষ্টা করছে এবং অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
খনিজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর জন্য উপযুক্ত নিয়মকানুন তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা নিশ্চিত করতে পারে যে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে কোনো ‘রক্তের খনিজ’ নেই।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ডিআরসি-কে সাহায্য করছে। যেমন, “ডড-ফ্রাঙ্ক অ্যাক্ট” এবং “ওইসিডি ডিউ ডিলিজেন্স গাইডেন্স”-এর মতো আন্তর্জাতিক উদ্যোগগুলো এই সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইলেকট্রনিক্স শিল্প। এই শিল্পে ব্যবহৃত অনেক যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এই ‘রক্তের খনিজ’ ব্যবহার করে।
তাই, এই শিল্পের কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব হলো তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বচ্ছ রাখা এবং নিশ্চিত করা যে তারা কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়।
তারা এখন তাদের খনিজ উৎস সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছে এবং টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
এই খবরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরাও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এবং আমাদের বাজারে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যের উৎস সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন।
আমাদের জানতে হবে, আমরা যে ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার করছি, তার পেছনের গল্পটা কী। আমরা যেন এমন কোনো পণ্য ব্যবহার না করি, যা কোনো মানুষের কষ্টের কারণ হয়।
আমাদের সকলেরই উচিত, নৈতিকভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং ‘রক্তের খনিজ’-এর মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা।
ডিআরসি-র এই লড়াই একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যে নৈতিকতা ও মানবাধিকারের বিষয়টি কতটা জরুরি।
আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই এবং এমন একটি বিশ্ব গড়ি যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা