যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর শঙ্কা বাড়ছে, কেন?
বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতির গতিপথ বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতেও দেখা যাচ্ছে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) দেশটির অর্থনীতি নিয়ে এক নতুন চিত্র তুলে ধরেছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি, বিশেষ করে শুল্ক (ট্যারিফ) নীতির কারণে অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে এবং সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর মতো একটি কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘স্ট্যাগফ্লেশন’ আসলে কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি এমন একটি পরিস্থিতি যখন একটি দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ বেকারত্ব এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি – এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বাড়াতে হতে পারে, অন্যদিকে বেকারত্ব কমাতে পদক্ষেপ নিতে হয়।
ফেডারেল রিজার্ভের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই বছর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ৪.৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া, ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় সূচক (Personal Consumption Expenditures – PCE) অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ২.৭ শতাংশে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ডিসেম্বরের পূর্বাভাসের তুলনায় এটি কিছুটা বেশি, যেখানে বেকারত্বের হার ৪.৩ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ২.৫ শতাংশ থাকার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বার্ষিক ১.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আগে ২.১ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভের এই পূর্বাভাস ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর দিকে ইঙ্গিত করছে। যদিও ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন, তবে বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
অতীতে, ১৯৭০-এর দশকে বিশ্বে একবার ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে সময় আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশগুলোর ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তেলের দাম বেড়ে যায়, যা জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয়, যার ফলস্বরূপ অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। পরে মন্দা কাটাতে সুদের হার কমানো হলেও মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭০-এর দশকের মতো ভয়াবহ না হলেও, শুল্ক নীতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি এর প্রভাব এখনই দৃশ্যমান নয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।
আমাদের নীতিনির্ধারকদেরও এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন