পৃথিবীর উষ্ণতা: জাতিসংঘের রিপোর্টে ভয়ঙ্কর তথ্য!

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট আরও তীব্র হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক অশনি সংকেত। জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত এক দশক ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম সময়, আর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) পরিমাণ গত ৮ লক্ষ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization – WMO)-র বার্ষিক ‘জলবায়ুর অবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত। মানুষের কার্যকলাপ, বিশেষ করে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার—এসবের কারণেই মূলত পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাঝে মাঝে দেখা দেওয়া এল নিনো নামক প্রাকৃতিক আবহাওয়া প্রক্রিয়া। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরা’র মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাড়ছে। এর ফলে বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য সংকট এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে।

শুধু গত বছরই অন্তত ১৫১টি ‘নজিরবিহীন’ চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার প্রকোপও বাড়ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘কনসার্নড সায়েন্টিস্টস’-এর ব্রেন্ডা একওয়ারজেল সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু বিজ্ঞানকে মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

একইসঙ্গে, জলবায়ু কর্মী ভানেসা নাকাতেও বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে আর দেরি করা উচিত না। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা এখন সময়ের জরুরি দাবি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *