এফ-৩৫ নিয়ে ক্যানাডার সিদ্ধান্ত: এখনই বাতিল নয় কেন?

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি বাতিল করবেন? এমন একটি প্রশ্ন এখন কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের মাঝে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ বাড়ছে তার ওপর। অনেকেই চাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে এই চুক্তি বাতিল করা হোক।

আসলে ঘটনা হচ্ছে, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬২টি অত্যাধুনিক F-35 যুদ্ধবিমান কেনার জন্য একটি বিশাল চুক্তি করেছে, যার মূল্য ১৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১৬টি বিমান আগামী বছরের শুরুতেই সরবরাহ করার কথা রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায়, বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে অনেকে এই চুক্তি বাতিলের পক্ষে মত দিচ্ছেন।

তাদের যুক্তি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর এখনই উপযুক্ত সময়।

কানাডার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লয়েড অ্যাওর্থি মনে করেন, এই মুহূর্তে F-35 যুদ্ধবিমান কেনা চালিয়ে যাওয়া ভুল হবে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রাসী আচরণের জবাব দেওয়া উচিত। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা এই বিমানের সফটওয়্যার আপগ্রেডের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।

কারণ এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের হাতে। ট্রাম্প যদি প্রতিশোধ পরায়ণ হন, তবে এই সফটওয়্যার আপগ্রেড বন্ধ করে দিতে পারেন, যা বিমানের কার্যকারিতা কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এই চুক্তি বাতিল করে কানাডার উচিত হবে সুইডেনের তৈরি Saab Gripen যুদ্ধবিমান কেনার কথা বিবেচনা করা। কারণ, এতে একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা কমবে, তেমনি কানাডার নিজস্ব সক্ষমতা বাড়বে।

তবে প্রধানমন্ত্রী কার্নি এখনই চুক্তি বাতিলের পক্ষে নন। তিনি এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কার্নি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময় নিতে চাইছেন।

কারণ, তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কার্নি মনে করেন, এই চুক্তিকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাণিজ্য আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কানাডার স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া, F-35 যুদ্ধবিমান বহরে যুক্ত করার আগে অন্যান্য বিকল্পগুলিও বিবেচনা করা দরকার।

কারণ, দুটি ভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমান পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি হতে পারে।

সব মিলিয়ে, F-35 যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি এখন কানাডার জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, অন্যদিকে দেশের সামরিক সক্ষমতা এবং অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, তিনি কোন পথে হাঁটেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *