সুদানের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই বছর: প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরুদ্ধারের দ্বারপ্রান্তে সেনাবাহিনী
খার্তুমে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরুদ্ধারের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সুদানের সেনাবাহিনী। দুই বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীর এই অগ্রগতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দেশটির সরকারি টেলিভিশনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে, যখন যুদ্ধ শুরু হয়, প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দ্রুত প্রাসাদ এবং রাজধানী খার্তুমের বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং নীলনদের তীর ধরে অগ্রসর হতে থাকে। বর্তমানে তারা প্রাসাদ পুনরুদ্ধারের একেবারে কাছাকাছি।
আরএসএফ ইতোমধ্যেই একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে এখনো খার্তুম এবং প্রতিবেশী ওমদুরমানের কিছু অংশ রয়েছে। এছাড়াও, তারা পশ্চিম সুদানেও তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে, যেখানে তারা দারফুরের সামরিক বাহিনীর শেষ ঘাঁটি আল-ফাশিরের দখল নেওয়ার জন্য লড়াই করছে।
রাজধানীর পতন ঘটলে সম্ভবত সুদানের কেন্দ্রস্থলের ওপর সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ফলে দেশটিতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি স্পষ্ট আঞ্চলিক বিভাজন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উভয় পক্ষই দেশের বাকি অংশ দখলের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শান্তি আলোচনার কোনো লক্ষণ এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
সুদানের বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, যার ফলশ্রুতিতেই এই যুদ্ধ শুরু হয়।
জাতিসংঘের মতে, এই সংঘাত বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট তৈরি করেছে। এর কারণে বিভিন্ন স্থানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে এবং পুরো দেশে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে। যদিও উভয় পক্ষই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখলের জন্য তীব্র লড়াই চলছে। আরএসএফ প্রাসাদটি ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ভবনের আশেপাশে স্নাইপার মোতায়েন করেছে। আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো সৈন্যদের প্রাসাদ না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা ও ড্রোন হামলার কারণে বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত খার্তুমের কেন্দ্রস্থলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেনাবাহিনীর হাতে আরএসএফের চেয়ে বেশি বিমান শক্তি রয়েছে। যদিও আরএসএফও সম্প্রতি ড্রোন ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে আরএসএফ জানিয়েছে, তাদের বাহিনী খার্তুমের কেন্দ্রে অবস্থিত সেনাবাহিনীর জেনারেল কমান্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ খার্তুমের দক্ষিণ দিক থেকেও আক্রমণ চালাচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিক থেকে সুদানের কেন্দ্রস্থলে সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা অনেক মানুষের কাছে স্বস্তিদায়ক হয়েছে, কারণ আরএসএফ ব্যাপক লুটপাট, নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং বাড়িঘর দখলের সঙ্গে জড়িত ছিল। আরএসএফ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ইতিমধ্যে, কয়েক লক্ষ মানুষ মধ্য সুদানে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তবে বুধবার গভীর রাতে ওমদুরমানের কর্মীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, কিছু সেনা সদস্য লুটপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যদিও সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন