যুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (ডিআরসি) এম২৩ বিদ্রোহীরা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ালিকালি শহরটি দখল করে নিয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই শহরটি খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে টিন এবং সোনার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
বিদ্রোহীদের এই অগ্রাসন শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে, যা ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে।
ওয়ালিকালি, উত্তর কিভু প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এখানকার টিন ও সোনার বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। এই অঞ্চলের বিদ্রোহীরা এখন পর্যন্ত যতগুলো এলাকা দখল করেছে, ওয়ালিকালি তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্রোহীদের হাতে শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় দেশটির সেনাবাহিনীর সরবরাহ পথও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া, দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম শহর কিসাঙ্গানির সাথে ওয়ালিকালির দূরত্ব ২৫০ মাইলের মধ্যে চলে এসেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে চলা এই সংঘর্ষে ইতোমধ্যে ৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।
এই সংকট মূলত ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার ফলস্বরূপ, যা কয়েক দশক ধরে চলে আসা একটি দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের অংশ। এম২৩ বিদ্রোহীদের রুয়ান্ডা সমর্থন করে এমন অভিযোগ রয়েছে, যদিও রুয়ান্ডা সরকার তা অস্বীকার করেছে।
বিদ্রোহীরা তাদের লক্ষ্য হিসেবে কঙ্গোর তুতসি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করার কথা বলে আসছে।
বিষয়টি নিয়ে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স সিশেখেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের মধ্যে কাতারে সরাসরি আলোচনা হয়। তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, বিদ্রোহীদের এই শহর দখলের ঘটনা তাদের সেই আহ্বানে সাড়া না দেওয়ারই প্রমাণ।
এছাড়াও, বিদ্রোহীদের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা একটি শান্তি আলোচনা থেকেও নিজেদের সরিয়ে নেয়।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যই মূলত এই সংঘাত। এই অঞ্চলের টিন ও সোনা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফলে, সংঘাতের পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থও জড়িত থাকতে পারে।
ওয়ালিকালির ঘটনা আফ্রিকার এই অঞ্চলের অস্থিরতা আরও বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু সমস্যা, খাদ্য সংকট এবং মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে।
শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান