মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি (আরএফই/আরএল)-এর তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় নির্বাসিত রুশ সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে, বিশেষ করে চেক প্রজাতন্ত্র, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার মতো দেশগুলোতে বসবাস করা অনেক সাংবাদিক তাদের ভিসা এবং আইনি অধিকার হারাতে পারেন।
এর ফলস্বরূপ, তারা হয়রানির শিকার হতে পারেন এবং এমনকি রাশিয়ায় ফেরত পাঠালে গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
**সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের ঝুঁকি**
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত হওয়া আরএফই/আরএল-এর প্রধান কাজ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবাধীন দেশগুলোতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা। বর্তমানে, বেলারুশ, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মতো দেশগুলোতেও তারা স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে।
কিন্তু সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সাংবাদিক তাদের চাকরি এবং বসবাসের অধিকার হারাতে পারেন। রুশ কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হওয়ার কারণে, তাদের রাশিয়ায় ফিরে যাওয়াটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আরএফই/আরএল-এর একজন দীর্ঘদিনের সাংবাদিক, আলসু কুরমাশেভা-কে ২০২৩ সালে রাশিয়ায় আটক করা হয়েছিল। পরে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান।
এই ঘটনাটি রুশ সাংবাদিকদের ঝুঁকির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
**তহবিল বন্ধের কারণ ও প্রভাব**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) জানিয়েছে যে, তারা সরকারি ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে আরএফই/আরএল-কে সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেবে। এর আগে, প্রযুক্তি বিষয়ক বিলিয়নেয়ার এলন মাস্ক এই গণমাধ্যমটিকে “বামপন্থী” বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আরএফই/আরএল-এর তথ্য অনুযায়ী, তারা প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক কোটি রুশ ভাষাভাষীর কাছে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। সরকারি সেন্সরশিপ এবং সামাজিক মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরেও, তাদের দর্শক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে, তাদের ইউটিউব চ্যানেলে দর্শক সংখ্যা বেড়েছে এবং মাসে প্রায় ৭ কোটি ৭৬ লক্ষ ভিউ হয়েছে।
যদি দ্রুত নতুন করে তহবিলের ব্যবস্থা না করা যায়, তবে আরএফই/আরএল তাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারবে না। ফলে, অনেক সাংবাদিক, যারা স্বৈরাচারী শাসনের কারণে দেশ ছেড়েছেন, তারা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
ভিসা বাতিল হয়ে গেলে, তাদের আইনি অধিকারও চলে যাবে এবং তারা কার্যত উদ্বাস্তু হয়ে পড়বেন। পাসপোর্ট নবায়ন করা বা কনস্যুলেট পরিষেবা পাওয়াও তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আরএফই/আরএল-এর মতো গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেলে, রাশিয়ার জনগণের কাছে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের অভাব দেখা দেবে। কারণ, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
**অন্যান্য গণমাধ্যমের সংকট**
শুধু আরএফই/আরএল নয়, অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও বর্তমানে সংকটের মধ্যে রয়েছে। ভয়েস অফ আমেরিকা এবং বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মতো গণমাধ্যমগুলোও তহবিল কমানোর শিকার হয়েছে।
বিবিসির অভ্যন্তরীণ উদ্বেগে প্রকাশ, সরকারি ব্যয়ের পর্যালোচনা শেষে তাদের আরও বেশি কাটছাঁটের সম্মুখীন হতে হতে পারে।
বর্তমানে, আরএফই/আরএল ইউএসএজিএম-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং তারা তাদের তহবিল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, ফেডারেল ব্যয়ের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র কংগ্রেসের রয়েছে।
একই সময়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই গণমাধ্যমটির জন্য বিকল্প তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে। চেক প্রজাতন্ত্র এই বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান